পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8R 8 মানিক গ্ৰন্থাবলী “না, চিঠিপততর পাইনি। কি জানেন দাদা, এ যুগটাই এ রকম, কারও কাণ্ডজ্ঞান নেই। নইলে ঘোষাল এমন কাণ্ডটা করতে পারে ? বামুন মানুষ তুই, গলায় তোর পৈতে আছে, সনদেবেলা তুই কিনা এক জেলেমগীর ঘরে -” কৈলাস হয়তো আবার বলে, “সেই যে পাত্রটির সন্ধান পেয়েছিলেন খুকীর। জন্যে, কতদূর এগোল প্ৰস্তাবটা ?” অবিনাশের হাতদাত সুড় সুড় করে, কৈলাসের গালে এক ঘা বসিয়ে দিতে, গায়ের কোথাও কামড়ে দিতে । নবীন সরকারের দাওয়ায় বসে হয়তো পাচজনে নানা কথা আলাপ করছে । সাৰ্বজনীন দুর্গোৎসবের সেক্রেটারী কিসে সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলল যে, সাত টাকা এগার আনা বিপিন মূদীর দোকানে ধার থেকে গেল, সকলে যখন এ সমস্যার কুলকিনারা পাচ্ছে না, কৈলাস হয়তো তখন আপন মনে বকে চলেছে, এ বছর বর্ষা কম হওয়ার ফলটা এ পর্যন্ত কি দাডিয়েছে এবং ভবিষ্যতে কি দাড়াবে । গ্রামান্তরে আত্মীয়ের বাড়ী যাওয়ার সময় ভূষণের বিধবা শালীর গর্ভটা ঠিক ক’মাসের হয়েছিল, সকলে যখন এই তর্কে মাসগুল হয়ে আছে, কৈলাস হয়তো তখন কেবলই সকলকে মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করছে যে, বিপিন মূদীর দোকানে দুৰ্গোৎসবের ধারটা সে এখন ঘরের পয়সা দিয়ে মিটিয়ে দেবে বলেনি, কয়েকজনের কাছে তার যে টাকাটা পাওনা আছে, সেটা পেলে তখন মিটিয়ে দেবে। এ কি কথা বলা ? আলাপ করা ? এভাবে কথা বলার চেয়ে মুখ বুজে থাকা কি ভাল নয় ? কৈলাস কখনো কোথাও চার অ্যানার বেশী চান্দা দেয় না, কোন উপলক্ষেই নয়। অন্তত পাঁচ টাকায় বিক্ৰী করা চলে এমন কিছু বাধা না দিলে পাঁচটা টাকা ধারা পৰ্যন্ত দেয় না। পাড়ায় যে থাকে, যার ছেলে সহরে একশ’ টাকা বেতনে চাকরী করে, তাকে পর্যন্ত নয়! হাসি মুখে আবার বলে যে, এভাবে টাকা ধার না দিলে শোধ করার কথাটা কারও মনে থাকে না, শোধ করার চেষ্টাও থাকে না । সকলের চোখের উপরে নিজের খুসীমত সে একটি ছোট পাকা বাড়ী তুলেছে - ক’খানা এবং কতবড় ঘর করা উচিত, দরজা জানালা কি রকম হলে ভাল হয়, এসব বিষয়ে কারও একটা পরামর্শও কাণে তোলোনি । পথ সংক্ষেপ করতে সকলে পায়ে পায়ে তার জমির উপর যে পথটি গড়ে তুলেছিল, বিনা দ্বিধায় তার উপর রান্নাঘর তুলে পথটা বন্ধ করে দিয়েছে। অনুযোগ অভিযোগের জবাবে হাসিমুখে বলেছে, কয়েক গজ বেশী হাটা মানুষের পক্ষে সমান কথা । পঞ্চাশ হাত তফাতেম