পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 8ቅ ዓr কেউ যাতে আর কোনমতেই ভুল করতে না পারে যে, তার ভাল ছাড়া মন্দ কোন উদ্দেশ্য আছে। কৈলাসও মাঝে মাঝে ওসব অঞ্চলে যায়, তবে কেদারের মতো কখনও নেতা হিসাবে উপরে উঠবার প্রেরণায়, কখনও গরু ছাগলের মতো যারা জীবন কাটায় তাদের জন্য কিছু করবার সখে, কখনও বা নবযুগের নতুন মতাবলম্বী অল্পবয়সী। অনুগত কর্মীদের সমর্থন হারানোর আশঙ্কায় অবশ্য ওদিকে যায় না, নিছক তার নিজের দরকারে । ওখানকার অনেকেই তার কাছে টাকা ধারে । টাকার পরিমাণটা অবশ্য খুবই কম, গরীবকে কৈলাস কখোনে দু’পাঁচ টাকার বেশী ধার দেয় না এবং সুবিধামত হয় টাকায়, নয় মাঠের ধানে, বিলের মাছে, গোয়ালের দুধে, তঁতের কাপড়ে নিজের প্রাপ্য আদায় করে নেয় । কৈলাসের নিজের কিছু জমি আছে, সেই জমিতে খেটে যদি কেউ দেন শোধ করতে চায় তাতেও কৈলাস আপত্তি করে না । তবে সুন্দটা কৈলাসকে নগদ দিতে হয় – পাঁচ টাকা পৰ্যন্ত মাসিক এক °न्नमा श्ल ! মফঃস্বলের ছোট সহর, কোথায় সহরের শেষ আর গ্রামের আরম্ভ, সরকারী কাগজপত্রের নির্দেশ দেখেও সেটা ঠিক করা যায় কিনা সন্দেহ। একদিন তাই নকুড় পালের বাড়ীর সামনে কৈলাস আর কেদারের দেখা হয়ে গেল । এগারজন বডিগার্ড অৰ্দ্ধচন্দ্ৰাকারে কেদারকে ঘিরে দাড়িয়েছে, হাত তিনেক তফাতে নকুড়ের আশেপাশে এলোমেলোভাবে দাড়িয়ে আছে পাড়ার কুড়ি বাইশজন লোক । কমবয়সী। ছেলেমেয়েও জুটেছে অনেক, কাছাকাছি প্ৰায় সমস্ত বাড়ীর বেড়ার ফাকে মেয়েদের মুখ উকি দিচ্ছে। ” সকলকে জড়ো করে কেদার সবে বলতে আরম্ভ করেছিল, কৈলাস একপাশে দাড়িয়ে মন দিয়ে তার কথা শুনতে লাগল। কৈলাসের উপর রাগ ছিল, সেইজন্য বোধ হয় তাকে দেখে কেদারের উৎসাহ গেল বেড়ে, অন্যদিনের চেয়ে অনেক বেশী আবেগের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে রোগ আর দারিদ্র্যের পীড়ন সকলের কী শোচনীয় অবস্থা হয়েছে, সকলকে তাই ভাল করে বুঝিয়ে দিল। এ অবস্থার প্রতিকারের জন্য সকলের যে প্ৰাণপণ চেষ্টা করা উচিত, এই কথাটা বুঝিয়ে দিতেও তার সময় লাগল অনেকটা । কেদারের বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র কৈলাস সায় দিয়ে বলল, “ঠিক কথা, ঠিক বলেছেন।” তারপর মুখে একটা জোৱালে আপসোসের আওয়াজ করে বলল “তবে কি জানেন, বেচারীরা করবে কি, করবার যে কিছু নেই!’