পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 8 RQy “আমি হলে চাইতে পারতাম না - দান করে দিতাম।” ‘কবার দিতেন ? দু'দশ টাকা দিলেই যদি চিরকালের জন্যে ওদের অভাব মিটে যেত। তবে আর ভাবনা ছিল না | ফাকে তালে কিছু লাভ করার সুযোগ পেলে বরং ওদের স্বভাবটা বিগড়ে যেত । ওদের আপনি জানেন না । নিজের যার রোজগার নেই। অন্যে তার কী করবে, কতকাল করবে ? দেশে কি গরীবের সংখ্যা আছে ।” “তাই বলে চুপ করে বসে থাকবেন ? কৈলাস হাসল। — “বসে আছি ? সারাদিন তো খাটছি, মশায় । অতবড় একটা সংসার ঘাড়ে কতকাল ধরে কত খেটে খুটে তবে না। আজ অবস্থাটা একটু স্বচ্ছল করেছি। ক্ষমতা তো তেমন নেই, কী আর হবে ! কত লোক বসে বসে লাখাপতি হয়, আমি জীবন পাত করে যা করলাম ছোট একটা বাড়ী করতেই ফতুর—তাও ঘরে কুলোয় না । ওদের অবস্থা দেখে প্ৰাণ কি কঁদে না মশায় ? কখন কি সাধ ষায় না। এর তিনটে টাকা, ওর পাঁচটা টাকা ছেড়ে দি ? তারপর ভাবি তাতে আর লাভটা কী হবে! মাঝখান থেকে আর দশজনের কাছে আদায় করার সুখ থাকবে না । হঠাৎ কারও বিপদ আপদ ঘটিল, পাঁচটা টাকা শোধ দিতে উপোস করার অবস্থা হল- তার কথা আলাদা । তাও খুব হিসেব করে আদায় বন্ধ করতে হয় মশায় । বািডলোক তো নাই, নিজেব কাৰণা টাকা ফুরিয়ে গেলে দরকারের সময় দু’পাচটা টাকাও তো কাউকে দিতে পারবো না ।” কৈলাসকে উত্তেজিত মনে হয়। জোরে নিশ্বাস গ্রহণ করে । হঠাৎ সুর বদলে, বলে, “আসল কথা ক্ষমতা নেই, বড় বড় কথা ভেবে করবো কি বলুন ? তাতে একুল ওকুল দু’কুল নষ্ট-ছেলেমেয়েগুলির দু'বেলা পেট ভরে ভাত জুটবে না। তার চেয়ে নিজের যেটুকু শক্তি আছে কারে। ক্ষতি না করে — ? কেদার বলল, “হ্যা হ্যা জানি। বক্তৃতায় আপনারা খুব পটু ৷ ক্ষতি করেই বা কত ছাড়েন । কবে আপনি আমায় জেলে মাগীর ঘরে যেতে নিজের চোখে দেখেছিলেন মশায় ?” 随 অভিযোগটা কৈলাস আগাগোড়াই অস্বীকার করল, কিন্তু কেদার বিশ্বাস কৱল না। মুখ, ফুটে অবিশ্বাসটা প্ৰকাশ করলে কৈলাস হয়তো কথাটা আরও খানিকটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু মুখের উপর মানুষকে ওভাবে মিথ্যাবাদী বলাও কেদারের পক্ষে বড় কঠিন। পোষ্টাপিসের কাছে ছাড়াছাড়ি হল। কেদারের সঙ্গী একটি ছেলে মন্তব্য