পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 89ፃ “কিসের গোয়াতুমি ? ভয় পেলেই ও শালারা মজা পায়। আমি জানি। : বাইরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। ক্ষেত মােঠ জলায় আর আকাশে চোখ বুলিয়ে যেতে যেতে পড়ার ব্যথা ও দুর্ঘটনার আতঙ্ক চাপার মিলিয়ে আসে-নতুন আর একটা লরীর আওয়াজ কানে আসার সময়টা ছাড়া। ধরে তুলবার ছলে মাতাল গোৱাটার অভদ্র কুৎসিত স্পর্শ টাই সর্বাঙ্গে ভয়ার্ত অস্বস্তিবোধের মত রি। রি করতে থাকে। একটা মুখ-ভাঙ্গা বোতল থেকে ঢেলে ঢেলে ওরা আবার মদ খেতে সুরু করেছে। লরীর ধাক্কা লাগার সময় বোতলের মুখটা বোধ হয় ভেঙ্গে গিয়েছিলো। পাকুনিয়ার মোডে বাস আসে। আরও দুজন গোরা উঠে আসে। দু’জন চাষাকে ধরে তুলে দাড় করিয়ে দিয়ে আগের তিনজনের পাশে বসে কিচির মিচির কথা শুরু করে দেয়—একজন হাতের বোতলটা দেখায় তিনজনকে । তিনজন ঘন ঘন তাকায় চাপার দিকে, নতুন দু’জন মাঝে মাঝে এদিকে ওদিকে চোখ ফেরানোর সময়টুকু ছাড়া চাপার গায়েই চোখ পেতে রাখে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই। একজন একতাড়া নোট বার করে চাপার দিকে বা ডিয়ে ধরে হাসে । দামোদর আর মহেশ্বর কটকটিয়ে তাকায় । রসুল ভ্ৰকুট করে নুয়ে হাত বুলোয়। চাপা তাড়াতাড়ি মুখ বার করে দেয় জানাল দিয়ে বাইরে । গাড়ীশুদ্ধ লোক স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে । রসুলের মুখের ভাবটা দেখবার এমন জোরালো ইচ্ছা দামোদরের জাগে ! "তার কেবলি মনে হয়, তার এই অপমানে রসুলের মুখে নিশ্চয় শয়তানী পরিতৃপ্তির হাসি ফুটেছে। তাকাবে না ভেবেও কখন যে সে তাকিয়ে বসে নিজেই টের পায় না। রসুলের মুখে হাসি নেই। কিন্তু তার দিকেই সে তাকিয়ে আছে অনুকম্পা-মেশানো অবজ্ঞাভিরা এমন এক মুখের ভার নিয়ে যার অর্থ আতি সুস্পষ্ট । চুপচাপ অপমান সহ করার জন্য রসুল তাকে মনে করছে অপদার্থ, অমরদ কেঁচো । শনের কাছে ঝ ঞ্চ করতে থাকে দামোদরের। তাড়াতাড়ি সে চােখ ফিরিয়ে নেয় । মনে মনে বলে, “রও। টের পাবে। তোমায় যদি না আমি-” কি করলে যে এ অপমানের প্রতিশোধ রসুল পাবে সে ভেবে পায় না । টাপার দিকে, গোৱাটার নোটের তাড়া বাড়িয়ে ধরার সবটুকু দোষ গিয়ে পড়ে রসুলের ঘাড়ে । স্বামল ভাবে, গোয়াটা যদি হাত দিত মাগীটার গায়ে! কি খুসিই সে হত।