পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 88S “ডবল বোঝা ঘাড়ে চাপিয়ে বলছ ? আঙ্গুল দিয়ে কপালের ঘাম টেছে এনে বেড়ে ফেলে রাঘব বলে, “বাপস ! কাপড়ের এত ওজন হয় জানতাম না বাপু ! এত কাপড় জন্মে দেখি নি দোকান ছাড়া ।” গৌতম চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে, “কাপড় ? কাপড় কিরে ব্যাটা ? বললাম না বস্তা নিয়ে যাচ্ছি ? মথুর সা বস্তা চেয়েছে চাল চালানের জন্যে ? ‘গতবার টের পেইছি বাবু, কাপড়।” "হ্যা, কাপড় ! তোকে বলেছে। সদরে খ খ করছে লোকে কাপড়ের জন্যে, বিশ টাকা দিয়ে কাপড় পাচ্ছে না একখানা, আমি নিয়ে চলেছি । ব্যাটার বুদ্ধি কত।” রাঘবের হাসিটা বড খারাপ লাগে গৌতমের । 'সদরেই তো বেচছে। বাবু। গুদাম করেছ মালদিয়ায়। এপথে মাল আনিছ মাসে দু’বার চারবার, পাঁচগডের পথে রোজ এদিক ওদিক চালান দিচ্ছে খানিক খানিক । মোরা বলি যে ঠাকুরবাবু পাঁচগড়ের পথে বাসে চেপে মালদিয়া যায় না। * কেনে, ফুলবাড়ী নেমে মজুরি দিয়ে মাল নিয়ে দু'কোশ হঁটে ? পাচগডের পথে ছোকরা বাবুরা পাহারা দেয়, তাই তো বিপদ ।” ‘কে বলেছে তোকে ? কার কাছে শুনলি ?” সভায় গৰ্জনে গৌতম জিজ্ঞেস कg । ‘কে বলবে বাৰু? আন্দাজ করিছি। মূখুা বলে কি এমন মুগ্ধ! মোরা ? গৌতম চট করে একটা বিড়ি ধরায়। একটু ভাবে। রাঘব যে বলল, মোরা আন্দাজ করিছি, তার মানে কি এই যে জানাজানি হয়ে গেছে ? মোরা কারা ? রাঘব আর তার আত্মীয়বন্ধু কজন, না। আরও অনেকে ? “তোকে চার টাকা মজুরি দি রঘু।” “আজ্ঞে বাবু। তোমার দয়া।” Ay "তাই বুঝি বলে বেড়াচ্ছিস আমার কারবারের ব্যাপার দশজনকে ? তোকে বিশ্বোস করলাম, তুই শেষে নেমকহারামি করলি রঘু ? দশ কুঁড়ের গা যেন জনহীন-কুকুর পর্যন্ত ডাকে না । পথের পাশে জলায় শালুক ফুটেছে আগুস্তি-দু’মাস আগে পর্যন্ত এই শালুকের ফসল তুলে প্ৰাণ বঁচিয়েছে এই বন্তি-গাগুলির স্ত্রীপুরুষ-অবশ্য সবাই নয়। বুক ফুলিয়ে দাড়াতে গিয়ে প্রায় পিছনে হেলে যায় রাঘব, আবেগের ভাৱে ভারাক্রান্ত গলায় বলে, 'নেমকহারামি ঠাকুরবাবু? বলছি নেমকহারামি ? হাটে সেদিন সভা করে