পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 88 (r গৌতমের কান্না, বিলাপ, অনুনয় বিনয়ের অন্ত ছিল না, রাঘব একবার দা’টা উচিয়ে ধরার পর সেও থেমে গিয়েছিল। এবার সে বিনিয়ে বিনিয়ে বলে, “আমায় ছেড়ে দে বাবা তোরা । আমায় মেরে কি হবে তোদের ? কাপড় পেয়েছিস, বামুনের ছেলেকে মেরে কেন মহাপাপ করবি ? ছেড়ে দে আমায়।” বলরাম বলে, “কি করে ছাড়ি ? ছাড়া পেলে তুমি গিয়ে তো পুলিশ আনবে বাবুঠাকুর।” গৌতম পৈতে ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করে, বাপ-মাির নামে আর দেব-দেবীর নামে দিব্যি গালে, পুলিশকে সে কিছু বলবে না।” "এ কথা কি মনে থাকবে বাবুঠাকুর ? তখন হতাশ হয়ে প্ৰাণ বঁাচাবার শেষ চেষ্টা করে” গৌতম বলে, “শোন বলি, পুলিশকে আমি বলতে প্রারি না। সাধ থাকলেও পারি না।” 喃 ‘পার না ? “না। বললে আমারি জেল হবে। এ কাপড় চােরাবাজারের মাল, পুলিশ যখন শুধোবে কাপড় পেলাম কোখোকে, কি জবাব দেব বল ? সত্যি বললে যার কাছ থেকে এনেছি তাকে ধরবে, আমাকে ধরবে, কারবার তো ফাক হয়ে যাবেই, জেল হয়ে যাবে আমাদের । চোরা মাল না হলে কি এ পথে মাল নিয়ে আসি, তোরাই বুঝে দ্যাখ। পুলিশ কেন, তোরা কাপড় লুটে নিয়েছিস, কারো কাছে বলবার উপায় নেই। আমার।’ রাঘব বলে, “তা বটে। এটা তো থুেয়াল করি নি মােরা।” সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এতক্ষণে । বাবুঠাকুরকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন না করে ফেলে তাদের উপায় ছিল না, কিন্তু জীবন্ত একটা মানুষকে এভাবে মারতে কি সায় দেয় মানুষের মন ! বাবুঠাকুর নিজেই যখন চোর, তার চোরাই মাল কেড়ে নিলেও কি করতে পারবে বাবুঠাকুর ? ওকে ছেড়ে দিলে তাদের কোন ভয় নেই। 擎 রাঘব বলে, “তবে তুমি যাও বাবুঠাকুর। অপরাধ নিও না।” উঠে দাড়াতে গিয়ে গৌতম পড়ে যায়। কথা বলতে গিয়ে গলার আওয়াজ বার হয় না। কাঠের মতো শুকনো গলায় ক’বার ঢোক গিলবার চেষ্টা করে সে কোনমতে বলে, “জল। জল দে একটু।” ‘মোদের ছোয়া জল যে বাবুঠাকুর।” গৌতম মাখা হেলিয়ে সায় দিয়ে বলে, “দে।” জল খেয়েই সে পালায়।