পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 R মানিক গ্ৰন্থাবলী “আজ্ঞে না । চিঠি পাইনি।” "এত বিলম্ব করে কেন চিঠি দিতে ? চিঠিপত্তর লিখতে তো দেয় জেল থেকে। না। স্বদেশী বলে কড়াক্কড়ি বেশি ? “কি জানি।” ভূধরের বুক লোমবহুল, ভুরু ঘন লোমের মােটা আঁটি। সহানুভূতির সকােতর ধীর উচ্চারণে সে বলে, “দ্যাকো দিকি ব্যাপার। বলি, তুই একছেলে বাপের, তোর কি স্বদেশী করা পোষায় ? কেন রে বাপু, বিয়ে থা করেছিস, ছেলে হয়েছে একটা, কঁচা বয়েস বৌটার – আঁ, কি বললে ?” কৃপাময় কিছু বলেনি, ভূধরের নিজের মন কথা কয়েছে কৃপাময়ের হয়ে। এসব কথায় কৃপাময় মুখ ফুটে সায় দেয় না, দুর্বোধ্য ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে মাথাটা শুধু একটু নাডে ! ভূধর বোধ করে অস্বস্তি আর অপমান। একটু ক্ষোভ জাগে রাগ হয়। তার ষে মনে পড়েছে তার ছেলে একটা নয়, যোয়ান মন্দ পােচ পাঁচটা ছেলে, এটা যেন কৃপাময়েরই ব্যঙ্গ করা তাকে । সে যাবে রুপাময়ের একমাত্র ছেলের জেলেযাওয়া নিয়ে আন্তরিক সহানুভূতি জানাতে আর তার মনে পড়বে তার পাঁচ ছেলের কথা ? এসব লোকের সঙ্গে কথা না বলাই ভাল। কতদিন সে ভেবেছে কৃপাময়ের সঙ্গে কথা বলার, গায়ে পড়ে যেচে কথা বলার স্বভাবটা ত্যাগ করবে, তবু যে কেন দেখা হলেই ওর সঙ্গে সে কথা কয় ! ‘মামলাটার কী হোলো সরকারমশায় ?” এ প্রশ্ন তো করবেই কৃপাময়। বড় ছেলে তার ঘুষের মামলায় পড়েছে, এখন সে মামলার কথা না তুললে ব্যঙ্গ সম্পূর্ণ হবে কেন । কড়া কথা ঠেলে আসে। ভূধরের মুখে, বলতে ইচ্ছে হয়, তোমার বাহাদুরী রাখো সামস্ত - কিন্তু মুখেই আটকে যায় কথাগুলি । কেন কে জানে । ‘চলছে। মামলা চলছে। সাজানো মামলা, ফেসে যাবে।” কৈফিয়তের মতো শোনায়, আবেদনের মতো । তার ছেলে লোক খারাপ নয়, মামলা সাজানো । কৃপাময় বিশ্বাস করুক, মামলা সাজানো। থুতু ফেলার বদলে ভূধর ঢোক গিলে ফেলে। নিমের দাঁতনের জন্যেই নিজের খুত্বটা বড় তেতো লাগে সন্দেহ নেই।

  • ওরা খুব খুশি হয়েছে, না। সামন্ত ? গায়ের লোক ? খুব ঢাক পিটিয়ে ৰেড়াচ্ছে ?”

একথা ওকে আমি কেন জিজ্ঞেস করলাম, ভুখর ভাবে। কৃপাময়ও তো গায়েন্স