পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 8t কৃপাময় বলে, "পয়সা নেই কাতু।” কাতৃ বলে, "পয়সা কিসের? তুমি মোর বাপ। তোমার ছেলে মোকে বাঁচালে মিলিটারি থেকে। তোমায় দুটি চিংড়ি দিয়ে পয়সা নোব? ধৰ্ম্মে সইবে মোর ? কাতু আরও কিছু চিংড়ি কচু পাতায় তুলে দেয়। “ছেলে ছাড়া পাবে কবে গো সামন্তমশাই ? “কতবার শুধাবি কাতু ? দেৱী আছে, এখনো দেৱী আছে।” 'মােকে বলবে, ছেলে কবে আসবে মোকে বলবে। ছেলেকে তােমার রুই খাওয়াবো, পাকা রুই, গোটা রুই আদমুণি । তোমার ছেলে যদি না মোকে বাঁচাত গো সামন্তমশাই – ” কাতুর ওখলানো যৌবনের অশ্লীলতা পর্যন্ত যেন ঢেকে যায় তার চোখ ছলছলানো মুখের মেঘে। এতক্ষণে কৃপাময় একদণ্ড তার দিকে তাকাতে পারে! ‘আয়তো কাতু খানিকটা লাউ কেটে দি তোকে । দুটি প্ৰাণী, এ লাউয়ের আধখানাও খেতে পারব না ।” লাউয়ের ফালি নিয়ে চলে গেলে কৃপাময় বলে ছেলের বৌকে, “লাউ চিংড়ি তো রাধবে বাছ, তেল কি আছে ?” ‘আছে একটুখানি,’ বলে কৃপাময়ের ছেলের ছেড়া সেলাই-করা গেঞ্জি গায়ে আর কোমরে ভাঁজ খোলা কঁথার লুঙ্গি-জর্ডানো বেী। “তাই রাধোগে। তবে ।” বৌ নড়ে না। চােখ তুলে একবার চায়, চোখ নামিয়ে ঠােয় দাঁড়িয়ে থাকে কৃপাময়ের সামনে, গেঞ্জি-পরা লুঙ্গি-জড়ানো রোগ প্রতিমার মতো। জলভরা চোখ দেখে রুপাময়কে একটু ভাবতে হয়। লাউ-চিংড়ি রাধতে বলায় তার ছেলের বৌয়ের চোখে জল আসে কেন ? তার ছেলের কথা ভেবে ? ছেলে তার বিশেষ লাউ-চিংড়ি খেতে ভালবাসত বলে তো মনে পড়ে না। তাছাড়া তার সামনে এ ভাবে দাড়িয়ে তার ছেলের কথা ভেবে বেী চােখে জল আনত না, আড়ালে CRV শেষে বুঝতে পেরে কৃপাময় বলে, ‘চাল বাড়ন্ত বুঝি মা ? তাই তো!’