পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি হয়ে যাবে, এটা জানাবার জন্য ওরা বিজ্ঞাপনট বন্ধ করেছে। ভেবেছে, রোজ বিজ্ঞাপন বেরোয়, কেউ পড়ে না, আজ বন্ধ করে দিলে এদিকে সকলের নজর পড়বে। বিজ্ঞাপন ছাপলে যতটা কাজ হেতো তার চেয়ে বেশি কাজ হবে না। ছাপলে । এইসব ভেবে- * অপরিচিত যারা কথা শুনিতে দাড়াইয়াছিল, তাদের একজন সায় দিয়া বলিল, “সেটা সম্ভব। আবার এও হতে পারে যে, খবরটা ওরা চেপে দিতে চায়। বিজ্ঞাপনটা নেই দেখে লোকে নিশ্চিন্ত হয়ে ভাবৰে এখন দু’চারদিন কোনো ভয় নেই।” আরেকজন বলিল, “যা বলেছেন মশায় !” ট্রামে উঠিয়া বসিয়া জগদীশ বলিল, “এমন ফ্যাসাদে পড়েছি ভাই কি বলব। দোটানায় পডে প্ৰাণটা বেরিয়ে গেল। ছেলেমেয়ে পাঠালাম এক জায়গায় উনি গেলেন আরেক জায়গায়, বিপদের সময় কার কাছে ছুটব আমি ? এখানে গেলে ওখানকার ভাবনা, ওখানে গেলে এখানকার ভাবনা । - দাও, একটা বিড়ি দাও।” 'दिद्धि' 6नछे ।' বিড়ি ছিল । জগদীশকে দিবে না ! ট্রামে এতলোকের সামনেই লোকটাকে তার মারিবার ইচ্ছা হইয়াছিল। সব সময় কেবল নিজের কথা ভাবে, নিজের কথা বলে। ভয়ভাবনা যেন তার একার, একচেটিয়া । ধনেশ যেন নিশ্চিন্ত মনে পরমসুখে দিন কাটাইতেছে, তার ভাবনা করিবারও কিছু নাই, বলিবারও কিছু নাই। এতকালের বন্ধু সে লোকটার, নিজে রাধিয়া ভাল খাইতে পায় না ভাবিয়া এক মাসের মধ্যে কতবার ওকে সে নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইয়াছে, প্ৰতিদানে তাকে একদিন একটু মুখের সহানুভূতি জানানোর অবসরও ওর হয় না। যখন তখন শুধু শুনাইতে পারে, এবার পাঠিয়ে দাও হে, সকলকে এবার কোথাও পাঠিয়ে দাও, আর দেৱী নয় । , জানাশোনা যত লোক শহর ছাড়িয়া পলাইয়াছে, জগদীশের মত প্ৰিয়জনকে দূরে পাঠাইয়া নিজে যাওয়ার জন্য যারা প্ৰস্তুত হইয়া আছে, তাদের বিরুদ্ধে নিরুপায় বিদ্বেষ ও অভিমান শুমৱাইয়া গুমরাইয়া মানুষ সম্বন্ধে ধনেশের চেতনায় এক অদ্ভুত বিকারের সৃষ্টি করিয়াছে। ট্রামে মানুষের ভিড়, পথে অজস্ৰ লোক চলিতেছে। এতলোকের মধ্যে ভয়ার্ত ধনেশের নিজেকে একা, অসহায় মনে হয় । কেউ তার কথা ভাবিবে না, তার দিকে চাহিয়া দেখিবে না । শহরে শুধু চলাফেরা করিতেছে স্বার্থপর, হৃদয়হীন দু’পেয়ে জীব, আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের মুখোশ