পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি 3 Wo বলবে কোথা এত জিনিস পেলে ? চুপচাপ থাকো তোমার পায় ধরি।” ‘শুধাবে ? কে শুধাবে ? মুখে নুড়ো জেলে দেব না !' মালতী কাদছিল। আগে থেকেই কিন্তু এবার এতক্ষণে সেটা খেয়াল হয় অটলের । খিদের জন্য তো নয়, খিদে মরে গেছে অনেকদিন, একবেলা পেট ভরে খাবার জিদে তার যেন নেশা হয়েছিল, গায়ে জোর বেড়েছিল। আর কিছু করার নেই, বসতে না বসতে ঝিম ধরে সে ঝিমিয়ে যায়। কদিন থেকে মালতীর এমনি ধরন ধারণ ধাধার মত লাগছে তার কাছে। কদিন থেকে ? বাবু যেদিন লোক মারফৎ ওকে বিশেষ টিকিট পাইয়ে দিয়ে সামনে দাড করিয়ে দুধ খাইয়েছে, শিশু আর প্রসূতিদের বরাদ্দ দুধ, সেদিন কি তার পরদিন থেকে । বেশ তিরিক্ষে কাঠখোট্টা হয়ে উঠছিল মালতী গোরস্ত ঘরের বেী মানুষের হায়া টায়া সব ভুলে গিয়ে, মতি রাধা এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালাক চতুর হয়ে উঠেছিল একটু বেশী আদায় করার ফন্দি ফিকিরে, কথা বলতে শিখছিল চটাং চটাং । মতি রাধাদের সঙ্গে খোঁকি কুকুরের মত সামনে সে ঝগড চালিয়েছে, মুখে তুবড়ি ছুটিয়েছে নতুন সেখা নোংরা কথার । বাবু কদিন দুধ আর খাবার • খাওয়াবার পর থেকে কেমন যেন সে ঝিমিয়ে মিইয়ে গেছে, শান্ত ভাল মানুষ হয়ে গেছে। ঘর ছাড়ার পর ঘরের কথা গায়ের কথা অটল কোনোদিন শোনেনি। ওর মুখে, এই কদিন মাঝে মাঝে কি যেন ভাবতে ভাবতে আনমনে ঘর সংসার আপনি জন চেন মানুষের কথা সে বলে-পুরানো হারানো দিনের কথা। এতকাল পরে হঠাৎ নতুন করে যেন ওর ঘর সংসারের জন্য কষ্ট আরম্ভ ठूCग्नCछ । রান্না শেষ করে খেয়ে উঠতে বেলী পড়ে আসে । খেতে সময় লাগে খুব কম। যে রকম ভোজ খাবে ভেবেছিল অটল তা হয় না, অল্প খেয়েই পেট ভরে যায়, জিভে স্বাদ লাগে না। না খেয়ে না খেয়ে খাওয়ার ক্ষমতাও গেছে। তবু এ পেট ভরেই খাওয়া, দিনের পর দিন যা খেয়ে পেট ভরত না তার দাশগুণ তো বটেপুষ্টিকর অন্নবাহন। খেতে খেতেই কিসের যেন ঝাঝ, কত যেন জ্বালা জুড়িয়ে যাচ্ছে স্পষ্ট অনুভব করে আটল, একটানা একটা ষে অদ্ভুত আওয়াজ প্ৰায় অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তা যেন ঝিমিয়ে আসতে থাকে দুই কানো! খেয়ে উঠে উদ্ভূত অস্বস্তি বোধ হতে থাকে প্রথমটা, হঠাৎ ওজন বেড়ে দেহটা যেন দশগুন ভারি হয়েছে, ভেতর থেকে বুকে কিসের চাপ পড়ায় স্বাস টানতে কষ্ট হচ্ছে, মাথাটা হয়ে গেছে হাল্কা, শূন্য। তারপর ঘনিয়ে আসে গভীর আলাস্ত আর অবসাদ। দুঃখ