পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি e “এই ক’ আনা পয়সা নে, কিছু কিনিস? দত্তবাবু বলে খানিকটা কাচুমাচু ভাবে, “আর শোন খাদু, বাড়িতে যেন বলিস না। আমায় মেলায় দেখেছিস।” পয়সা পেয়ে খাদু মুচকে হেসে মাথা নাড়ে। দত্তবাবু এগিয়ে গেলে পিছু থেকে জিভের ডগাটুকু বার করে তাকে অবজ্ঞার ভেংচি কাটে। এমনও পুরুষ হয়, বৌয়ের ভয়ে মনখুশিতে মেলায় আসতে ডরায় ! মেলার মাঝখানে জমজমাট অংশে আটকে যায় খাদু, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে এই-- খানেই । মোড়ের মাথায় মন্দিরের বদলে একটা চেপ্টা ঘরের মধ্যে সিঁদুরলেপ দাত-খি চানো ভীষণাকৃতি দানবরূপী প্ৰকাণ্ড দেবতা, খাদু ভক্তি ভরে প্রণাম করে । দাডিয়ে দাড়িয়ে খানিকক্ষণ পুতুল নাচ দ্যাখে, রামায়ণ মহাভারতের রাজা রাণীদের চেয়ে দেখে তার মজা লাগে শণের দাড়িওলা মুনিগুলো আর হনুমানকে । সুলো খঞ্জ অন্ধ ভিখারীদের দিকে না তাকিয়ে সে দু’টি পয়সা দেয় যোয়ান মর্দা ভিখারিকে, কেঁদে কেঁদে ভগবান ভাল করবেন বলার বদলে সে হেড়ে গলায় সবাইকে শাসিয়ে ভিক্ষা চাইছে, তাকে না দিলে তুমি মরবে, তোমার সর্বনাশ হবে। অনেক কিছু কেনার এত সাধ নিয়েও ওই আংটি আর একটি আশি ছাড়া আর কিছুই কেন হয়নি। খাদুর, কিছু কিনতে গেলেই মনে হয়েছে, কার জন্য কিনবে, তার কে আছে, কি কাজে লাগবে তার জিনিসটা তার ঘর নেই, সংসার নেই, সাজাগোজা নেই, আরামবিরাম নেই। কি করতে সে মেলায় এলো, কি সুখটা তার হল মেলায় এসে । আপন মনে এমনভাবে ঘুরে বেড়াতে কি ভাল লাগে মেলায়। এত লোকের হাসি আনন্দ উৎসবের মধ্যে থেকে খোচা দিয়ে দিয়ে মনটাতে ব্যস্ততা এনে শুধু খাঁ Ni ga f মেয়েছেলেরাও উঠেছে নাগরদোলায়, দু’জন চারজনে একসঙ্গে, নয়তো পুরুষ সাখীর সঙ্গে, লজ্জা সরাম ভুলে আওয়াজ ছাড়ছে অদ্ভুত, দিশেহারা হয়ে আঁকড়ে ধরেছে। সাখীকে, খিলখিলিয়ে হাসছে যেন ভূতেপাওয়ার হাসি। একসঙ্গে ওই ভয় আর ফর্তি, ওপরে উঠে নিচে নেমে দোল খাওয়ার ওই বিষম মজা আর তীব্র সুখের শিহরণ যে কেমন খাদু কি আর জানে না। সাখী কেউ থাকলে সেও একটু নাগরদোলায় চাপত, অনেকদিন পরে আবার একটু চেখে দেখত কেমন লাগে নিজের ভেতরে ওই শিরশির করা । “কি ভাব মাঝখানে কোথায় সরে গিয়েছিল, আবার পিছু নিয়েছিল লোকটা পুতুল নাচ