পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bም মানিক গ্ৰন্থাবলী সকলে নয়। তবু এদের বড় ভাল লাগে গৌরের, জন্ম থেকে এদের চলাফের দেখে এলেও ওরা তার মনে একটা রহস্যের সৃষ্টি করে রেখেছে, একটি ছিপছিপে কিন্তু পরিপুষ্ট সঁওতালী মেয়েকে বিয়ে করার অবাস্তব অসম্ভব কল্পনা আজও তার মনে উকি দিয়ে যায়। অমন মেয়ে চাষীর ঘরে জন্মায় না। হাঁটতে ঠাটতে অনেক বেলায় মামাবাড়ীত্ব কাছাকাছি পৌছে গৌরের কানে এল একক একটি শানাই-এর সুর। শানাই শুনলে গৌরের মন কেমন উদাস হয়ে যায়, মনে হয়। বাকী জীবনটা ঠাকুরদেবতাকে ভক্তি করে, গুরুজনকে মান্য করে আর পরাস্ত্রীর দিকে না তাকিয়ে কেবল ভাল কাজ করে কাটিয়ে দেওয়া চাই । সে মরলে সবাই যেন বলে, লোকটা বড় ভাল ছিল গো । গৌরের মামাদের মস্ত সংসার, পায়ের ধুলো নেওয়া দেওয়ার পালা সাঙ্গ করে - গৌর শুধোলে, “শানাই বাজে কার বাড়ী গো ?” ‘কুনুন মেয়ার বিয়া—লক্ষীর। সেই যে মুটুকী মেটো ঘন ঘন আসত মোদের বাড়ী‘বটে ।” বর আজ এসে গিয়েছে, কাল সন্ধ্যাবেল বিয়ে। আজ কুটুম ভোজন কাল স্বজাতি ভোজন হবে । কুনুর নাকি ভয়ানক ফাকি দেবার মতলব আছে শোনা যাচ্ছে, দই চি ড়ে আর মোটে একটা করে মিষ্টি দিয়ে সেরে দেবে। জোড়া মিষ্টি না দিলে গােলমাল হবে শোনা যাচ্ছে। কুটুমদের দেবে জোড়া মিষ্টি আর মােয়। স্বজাতির বেলা শুধু একটা মিষ্টি-সইবে কেন স্ব জাতিরা ? “তোর বিয়েতে নুচি খাব গৌর।” বডমামী ক্ষীণ কণ্ঠে বলল। বড়মামী জীবনে আঁতুরে গিয়েছে সতেরবার, একটি। বয়সে স্ত্রীলোকমাত্রেরই সন্তান ধারণের ক্ষমতা ফুরিয়ে যাবার ব্যবস্থা বিধাতার না থাকলে হয়তো আরও দু’চারবার যেত । সতরটি এলেও আটটি সন্তান আতি শৈশবে এবং দুটি অল্প বয়সে চলে গিয়েছে তাই রক্ষা । সাতটির মধ্যে তিনটি মেয়ে পরের ঘরে নিয়ে পুষছে, তাও রক্ষা । তাছাড়া, সবগুলি এসে পড়বার আগেই বড় দুটি ছেলে পরপর বড় হয়ে পরপর রোজগার করতে শিখেছে। শেষ বিয়োনোর পর দু’বছর কেটে গেছে, কেন বেঁচে আছে না জেনেই বড়মামী টিকে আছে ক্ষয়রোগিনীর মত জীর্ণ শীর্ণ শরীর নিয়ে। জর হয় মরে না, কাসি হয় মরে না, হজম না হওয়ায় প্রায়ই কাপড় বিছানা নষ্ট করে আর নিজের মনে অনর্গল কথা বলে বেঁচে থাকে ।