পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GV9R शांनिक ७होदकी জল খেয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে ছিদাম। সন্ধ্যা সেরে আবার নিঝুম হয়ে বসে থাকে কুজা তার দিকে পাশ ফিরে । কেমন যেন হয়ে গেছে কুজা । একসঙ্গে জীবন্ত আর মরা। এতক্ষণের লক্ষণগুলি মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌছয় ছিদাম । নিজে থেকে যেচে সে তাকে এতটুকু আদর যত্নও করেনি। তামাক চাইলে সিগারেট দিয়েছে, মুখ হাত ধুতে চাইলে কাপড় গামছা জল দিয়েছে, খেতে চাইলে মুড়িগুড় খেতে দিয়েছে দিয়েছে প্ৰবল উৎসাহের সঙ্গে, আগ্রহে একেবারে যেন অধীর হয়ে পড়ে, কিন্তু চাইলে তবে দিয়েছে, যা চেয়েছে, শুধু সেইটুকু। কিছু যেন খেয়াল নেই কুজার, মনে নেই। একদিন সে স্বামী ছিল সেটা নয় বাদ গেল, একটা মানুষ ঘরে এলে, একটা মানুষকে ঘরে ডেকে বসালে, তার সুখমবিধার দিকে যে একটু তাকাতে হয় তাও কুজা ভুলে গেছে। খেয়ে উঠেছে, তাকে এখন আরেকটা সিগারেট দিলে হয় । না চাইলে কি দেবে । চাইলে হয়তো লাফিয়ে উঠবে দশটা দেবার জন্য । তবে, গোড়ায় ভড়কে গিয়ে বিদায় নিতে চাইলে কুজা তাকে বসতে বলেছিল। মুখ ফুটে ছিদামকে বলতে হয়নি, বসুম না কি ? তা, এক হিসাবে ধরলে, এতকাল পরে ফিরে এসেই চলে যাওয়ার কথা বলা মানেই তো ডেকে বসতে বলতে মনে করিয়ে দেওয়া ! কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করে ছিদাম । কুজাকে এভাবে আবিষ্কার করার অস্বন্তি ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু। বাইরে বাদলার আঁধার, ঘরে পিদীমের মিটমিটি আলো, তারা, দু’জন থাকলেও তাদের ঘিরেই যেন নির্জনতা আর স্তব্ধতা থম থম করছে । তার ভাঙ্গাচোরা নোংরা ঘরখানা সাজানো গোছানো পরিষ্কার, তার কঙ্কালসার বৌটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দরী যুবতী - নতমুখে ঝিম হয়ে বসে আছে তো বসেই আছে। ছিদামের মধ্যে যুগযুগাস্তের পুঁজি করা স্কুপাকার রহস্যানুভূতি আর ভয় পাকিয়ে পাকিয়ে মাথা তুলতে থাকে ধীরে ধীরে। এরকম কত গল্প সে শুনেছে কত লোকের মুখে । দশ পনের বছর পরে বিদেশ থেকে মানুষ ফিরাল সঁাজসন্ধ্যায়, দেখল ঠিক যেমনটি রেখে গিয়েছেল ড়োমনি গিজ গিজ করছে বাড়ি ভরা আত্মীয় পরিজন-অথবা ভেঙ্গেচুরে গেছে ঘরবাড়ি, তার মধ্যে মাথা গুজে আছে দু’একজন আপনার লোক। অথচ অনেকদিন আগেই একরাত্রে রোগে কিম্বা দুর্ঘটনায় ছেলেবুড়ো মেয়েপুরুষ সব মরে বাড়িটা শ্মশান হয়ে গেছে, সন্ধ্যার পর সে পোড়ো বাড়ির ধার দিয়ে কেউ ইটে না? বাড়ি যে তার শুধু মায়া, আপনজনেরা রক্তমাংসের জীব নয়, বিদেশী মানুষটা উড়া শুধু টের পেয়েছে বোঁকে কাঠের বদলে