পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R মানিক গ্ৰন্থাবলী কুনু আবার আসে, বলে, “বেলা যে অনেক হল! দয়া করে গা তুলতে আজ্ঞা হয়। মাইতি মশায়।” এবার নবকান্ত বলে, “কুটুমদের একগণ্ড মিষ্টি মিলেছে কুনু ? “একগণ্ডা ? কুনু কপালে চােখ তুলে জবাব দেয় “একটার বেশী মিষ্টি দেবার খেমতা আছে যে দেব ? একটা মিষ্টি দিইছি, নার্কলে - । আপনাদের জন্যে চন্দ্রপুরি আর মোয়া।” “মোয়া ? 'মুড়কি নয়তো মোয়া, যার যা পছন্দ। “কটা মোয়া ?” কুনু একটু ভাবে। চকিতে একবার সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে নেয়। ‘দুটাে মোয়া। মোয়ার বদলে পোয়া মুড়কি।” তখন সকলে গাত্ৰোখান করে খেতে গেল। কুটুমদের সমান সম্মান আদায় করা হয়েছে, এখন আর ভোজন করতে অপমান নেই। দাওয়ায় বসে খেতে খেতে লক্ষী বার তিনেক গৌরের নজরে পড়ল। কঁচা হলুদ মাখিয়ে মাখিয়ে তার নিজের বাদামী রঙ মেয়ের প্রায় লোপ করে দিয়েছে। কেমন শুদ্ধ আর পবিত্র দেখাচ্ছে মোটা মেয়েটাকে । গৌর তাকে না বলে আচমকা মামাবাড়ী চলে গিয়েছে শুনে প্রথমটা চিন্তামণি রাগে অভিমানে চারদিক অন্ধকার দেখেছিল, তারপর ভেতরে কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গিয়ে তার নিজেরই মনে হল সে যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচে গেছে। এমন ভীষণ ভাবে কোন মানুষের কাছে ধরা পড়ার স্বভাব তার নয়। গৌরকে নিয়ে নিজেকে একেবারে বেমালুম ভুলে যেতে বসেছিল, কি এমন মানুষটা গৌর ? চালচুলো ছাড়া কিইবা আছে। ওর যে ওকে নিয়ে মেতে থাকলে তার সুখের সীমা থাকবে না ? কি প্ৰত্যাশা আছে। ওর কাছে ? অন্ততঃ ক’দিনের জন্য গৌর দূরে চলে গেছে, দিনান্তে তার সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য দেখা হবার সম্ভাবনাও এখন নেই, এটা খেয়াল করার সঙ্গে চিন্তামণি আজ প্রথম সচেতন হয়ে উঠল, মনটা তার কিভাবে গৌরময় হয়ে উঠেছিল দিন দিন । ঘুম ভেঙে সে ভাবতে আরম্ভ করত গৌরের কথা, দেখা হলে কি বলবে, কি করবে আর কি হবে এই কথাই ভাবত বিভোর হয়ে সারাটা দিন। বাড়ীর গিন্নি আর তার মেয়ের কাছে এজন্য কতবার যে বকুনি খেয়েছে, যা হয়েছে তার জন্য