পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি (b) টুকিটাকি উপহার, মিঠেকথা মোসাহেবী এসব উপচারে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেও বজায় রেখে চলতে হয়। মানুষের মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণ যে তাহার ভুল হয়নি। পরে শিবরাম তার প্রমাণ পেয়েছে। মিঃ রায়ের হাত থেকে কণ্টক্ট খসে চলে এসেছে তার কাছে। ঘুষ দিয়ে পেরে উঠবে কেন মিঃ রায় তার সঙ্গে, সেই সঙ্গে লে যদি মানুষকে বশ করতেও আরম্ভ করে অন্যভাবে তবে আর কথা কি ৷ শিবরাম বলেছিল, এমন ফাকি আমরাও দিতে শিখিনি, আমাদেরও বিবেক আছে । তিনভাগ টিন মৰ্টেধরা, ফেলে দিতে হত। ভেতরে একটু সিমেন্টগোল জল ছিটিয়ে দিয়েছে। ইট তো দেয়নি ভিটেতে – জঞ্জাল আর আবর্জনায় ফাপা করে রেখেছে। এমনিতেই লাখখানেক ইদুর বাস করত, এখন শেয়াল গর্ত খুঁড়ে বাচ্চ মানুষ করবে ! শশাঙ্ক বলে, উপায় কি, এক জায়গায় তো জমা করে রাখতে হবে, বাজারে ছাড়লেই তো পড়বে গিয়ে আপনাদের এজেণ্টদের হাতে। এমনি তবু গরীবদের পাবার ভরসা আছে দু’দশ ছটাক, তখন আর চোখেও দেখতে পাবে না । ওসব আটাময়দা চাল আমরা খাই না মশায় । আপনার ভাল জিনিস খান, কিন্তু বেচেন তো এসব। খাবার জন্যে না। কিনুন, চালান দেবেন, নয়। চালানী দামে আশেপাশে বেচবেন । এমনিভাবে কথা বলে শশাঙ্ক, জীর্ণ শীর্ণ আধাবুড়ো এক কেরানী। এই দুভিক্ষের দিনে তেত্রিশ-হাজার মন খাদ্য দেখাশোনা করার দায়িত্ব পেয়ে বুকটা যেন তার ফেঁপে উঠেছে। দায়িত্ব তো ভারি, শুধু দেখা যে বড় বড। তালাগুলি ঠিকমত লাগানো আছে আর দারোয়ান ও পাহারাওয়াল ক'জন ঠিকমত কাজ । করছে। একটা তালা খুলবার ক্ষমতাও তার নেই। তবু তার কথা শুনে মনে হয়, চারিদিকের ওৎ-পাতা মুনাফাখোরদের কবল থেকে সেই বুঝি এই খাদ্যগুলি প্রাণপণ চেষ্টায় বাঁচিয়ে সাধারণ দুঃখী লোকের জন্য জমিয়ে রেখেছে। তবে, শশাঙ্ক কখনো শক্ৰতা করে না। হাতের তালুতে ভাজকরা কিছু নিয়ে ওর হাতে হাত মেলাতে খালি হাত ফিরে আসে, খাতির বাতিল করার বাহাদুরী ওর নেই। তার সরবরাহ আটহাজার মন আটা দেখে সেও মুখ বঁকিয়েছিল, কিন্তু সময়মত জায়গামত ঠিক কথাটি বলতে কসুর করেনি,-আটা মোটা হলে একটু ভেঁাতা গন্ধ ছাড়ে হজুৱা, নতুন আটাতেও । লোকে এ আটা পেলে লুফে নোবে! না বললেও অবশ্য ক্ষতি ছিল না কিছু। কেনা মাল যেমন হোক গুদামে তোলাই তখন কাজ। পরের কথা পরে ।