পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ser * মানিক গ্ৰন্থাবলী কাছ থেকে ! মাটির টাকাগুলো যা’কে বেচে লাভ হবে, টাকার বদলে পাওয়া বেশী টাকাটা এভাবে খাটিয়েও তার লাভ হবে । চাষী চাদের মনে এই সব চিন্তা পাক খেয়ে বেড়ায় - অনভ্যস্ত এলোমেলো চিন্তা বলে একেবারে উতলা করে দেয় তাকে। রূপের মল বেচে আশাতীত লাভ করেছে বলে শুধু এই পণ্যটির কথাই সে ভাবে, আরও কত কিছু কেনা-বেচার মধ্যেও যে এরকম লাভের সুযোগ দেখা দিয়েছে সে সব তার মনেও আসে না, সোনার কথাটা পৰ্যন্ত নয় ! 响 দেখা গেল, বুড়ীর ঘটি চুরি করার কাজটা মোটেই সহজ নয়। ঘর ছেড়ে বুড়ী বড় একটা কোথাও নড়ে না। বেশীর ভাগ সময় ঘরে বিছানায় শুয়ে থাকে, বাকী সময়টা ঘরেরই সামনে দাওয়ায় উবু হয়ে দু’পায়ের হাঁটু মাথায় ঠেকিয়ে বসে থাকে, কখনো আপন মনে বিড়বিড় করে, কখনো কঁপা গলায় তারস্বরে চেচিয়ে একে ওকে গাল দেয়। নাইতে খেতে ও প্রকৃতির তাগিদে বুড়ীকে অবশ্য সরে যেতে হয় কিছু কিছু সময়ের জন্য, কিন্তু চাদ ভরসা পায় না । বিছানা তুলে মাটি খুঁড়ে আবার গর্ত বুজিয়ে এমন ভাবে বিছানা পেতে রাখতে হবে, বুড়ীর যাতে সন্দেহ না হয়। বুড়ীর অনুপস্থিতির সময়টুকুতে সেটা সম্ভব নয়। ‘চণ্ডীতলায় পূজো দিতে যাবে বলছিলে না মা ? তা যাও না, দিয়ে এসো পূজো ।” চাঁদ বুড়ীকে জপায়। হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বুড়ী বলে, “মাথায় থাক পূজো দেয়া । অদৱ কি চলতে পারি ? তুই যা না বাপ, দিয়ে আয়না পূজোটা ?” ‘বুড়ো মানুষ, সাধ হয়েছে, ডুলি করেই যাও। ডুলির পয়সা দেব’খন আমি। বিন্দুকে বলে দিচ্ছি।” ডুলি চেপে চণ্ডীতলায় পূজো দিতে যাবার জন্য প্ৰস্তুত হয়ে বুড়ী চাদকে দিয়েই ঘরের দরজায় কুলুপ আঁটায়। শিকল কপাটের নীচের দিকে, কুলুপটা বুভী আবার নিজে টেনে দ্যাখে ঠিকমত লাগল কি না! ডুলি ভাড়া গচ্ছা যাবার দুঃখের সঙ্গে নতুন নির্যাৎ মতলব ঠাউরাবার চেষ্টায় মাথা ঘামানোর পরিশ্রম মিশে প্ৰায় কাবু করে আনে চাদকে । ভাবতে হয় এক, বৌয়ের সঙ্গে যে একটু পরামর্শ করবে তারও উপায় নেই। যতই হােক, সে তো মেয়ে বুড়ীর। বোকা মেয়েমানুষ, হয়তো গণ্ডগোল করে বসবে। বুড়ী চণ্ডীতলায় গেলে ছুতো করে বৌকে গৌরের রুগ্ন মার খবর আনতে পাঠিয়ে কাজ হাসিল করবে ভেবে রেখেছিল। পুৱানো মর্চে ধরা এক কুলুপের জন্য সব ফন্ধে গেল !