পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wgbr মানিক গ্ৰন্থাবলী দেখে দুদিন পরে তার কি অবস্থা হবে এই ‘চিন্তায়। মোটামুটি পেট ভরে খেতে না পেলে হয়তো আতঙ্কে এতটা কাবু হয়ে পড়ত না গৌর। পেটের খিদে তার চিন্তা আর অনুভূতিকে ভেঁাতা করে দিত, বিরামহীন কল্পনার ভয়াবহ ভবিষ্যৎ এমন পাহাড় হয়ে চেপে বসত না তার মনে । ধীরে ধীরে গৌর রঘুর বাড়ীর দিকে হাঁটতে আরম্ভ করে। পা তার চলতে চায় না। পর হয়েও এ জগতে রঘুই তার সব চেয়ে আপনার, পরমাত্মীয়ের চেয়ে ঘনিষ্ট। তবু আবার রঘুর কাছে ধান বা চাল ধার চাওয়ার কথা ভাবতেও তার কেমন বিশ্ৰী সঙ্কোচ হচ্ছে। রঘু দু’বার তাকে ধার দিয়েছে। মুখ ফুটে দেবনা বলেনি। কিন্তু শেষ বার কেমন যেন বিরক্ত আর অসন্তুষ্ট মনে হয়েছিল। রঘুকে, ধান মেপে দেবার পর ভাল করে কথা কয়নি। মুখ হঁাড়ি হয়ে গিয়েছিল বিরজার। বাড়ীর অন্য সকলের কথায় ব্যবহারেও একটা চাপা শক্রতার ভার গৌর অনুভব করেছিল । কিন্তু উপায় কি। পয়সা কড়ি কিছুই নেই গৌরের হাতে। চিন্তামণিকে পৈছে কিনে দিবার সখ না জাগলে হয়তো গোটা কয়েক টাকা থাকত। তার হাতে, আজি আবার গিয়ে হাত পাততে হত না রঘুর কাছে। রঘু তামাক টানছিল দাওয়ায় বসে, চিন্তিত গভীর মুখে । উঠনের এক কোণে মাঝারি পাত্রটায় ধান সেদ্ধ হচ্ছে। সুমিষ্ট চেনা গন্ধে গৌরের পেটের অল্প দুটি ভাত যেন চোখের পলকে হজম হয়ে গিয়ে দুর্দান্ত খিদে পাক দিয়ে ওঠে । তাকে দেখে রঘু বিশেষ খুশী হয়েছে মনে হয় না গৌরের। হুকোটা দিয়ে অভ্যর্থনা করতেও সে যেন ভুলে গেছে। গৌরের মনে পড়ে, গতবার ধান দেবার পর থেকে এ পর্যন্ত একটি বারের জন্যও রঘু খবর নিতে যায়নি। সে বেঁচে আছে কি মরে গেছে । গলা শুকিয়ে যায় গৌরের। আরও একটা নতুন আতঙ্ক তাকে প্ৰায় দিশেহারা করে দেয়। রঘুও কি সত্যই তাকে ত্যাগ করবে তার বিপদের দিনে ? নিজেকে কি যে অসহায় মনে হয় গৌরের। আজ সে ভাল করে টের পায়, চিরকাল সে কতখানি নির্ভর করে এসেছে। রঘুর ওপর, এখনো সে কতটা ভরসা রাখে ওর কাছে। ধান আজ চাইবে কি চাইবে না ভেবে পায় না গৌর। ধান চাইলে যদি ভেঙ্গে যায় তাদের বন্ধুত্ব, সম্পর্ক চুকে যায় আজ থেকে ? যদি স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই সত্যটা যে সাহায্য দূরে থাক, রঘুর কাছ থেকে সহানুভূতি পাবার আশাও তার নেই। অথচ কথাটা আজ স্পষ্ট করে না নিলেই বা লাভ কি! রঘু যদি তাকে