পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

** * মানিক গ্ৰন্থাবলী এখন কি যেতে পারে না সে বাড়ি ফিরে ? একেবারে প্রথম দিনের পক্ষে এই কি যথেষ্ট হয়নি, আজ আর নাই বা এগোল ? নিজের মনেই মাথা নাড়ে হেমন্ত । এক উঠে চলে যাওয়া যায় না একার প্রয়োজনে । না এলে ভিন্ন কথা ছিল, এখন আর ফিরে যাওয়া চলে না । তার না হয় মার জন্য অবিলম্বে বাড়ি ফেরা একান্ত দরকার, একা হলে হারও না হয়। সে মেনে নিত সেজন্য নিজের কাছে অপমানে নিজে কালো হয়ে গিয়ে, কিন্তু এদের সকলকে হার মানাবার অধিকার তো তার নেই। সে উঠে গেলে আর একজন দু’জনও যদি তার অনুসরণ করে ? সীতাকেও মনে পড়ে হেমন্তের । ২ মার মতোই তাকেও মনে হয় বহু দূর, কুয়াশাচ্ছন্ন। মার মতো বড় বড় চোখ নেই সীতার, তাই বোধ হয় চোখ দুটি পর্যন্ত তার কল্পনার সীমান্তে সরে গেছে ধারণা হয়। সীতার মৃদু ও তীক্ষ্ম ব্যঙ্গ, আচমকা ঘনিয়ে আসা গাম্ভীৰ্য, তিক্ত বিষাদ আর কটু অনুকম্প ভরা কথা এবং কদাচিৎ হেমন্ত যে কোন শ্রেণীর জীব ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারছে না। এমনি বিব্রত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা, এসব যেন প্ৰায় ভুলে যাওয়া অতীতের স্মৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে, এসবের জন্য যে প্ৰতিক্রিয়া জগত নিজের মধ্যে তাই যেন হেমন্তের অবলম্বন । অথচ, আজকেই দেখা হয়েছিল সীতার সঙ্গে । ‘এসো ভালো ছেলে’ বলে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল সীতা । বলেছিল, “ক্লাস হল না বলে কষ্ট হচ্ছে ? মন খারাপ ? কি করব বল! সবাই তো বিদ্যালাভ করেই খুলী থাকতে পারে না, অন্যায়-টন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও জানাতে চায়।” আজ যেন রীতিমতো বঁাজ ছিল সীতার কথায়, শুধু ব্যঙ্গাত্মক খোঁচা নয়। হেমন্তের মনে হয়েছিল, সে যেন শেষ পৰ্যন্ত সন্দিহান হয়ে উঠেছে তার মনুষ্যত্ব সম্বন্ধে। তার সঙ্গে মতে না মিলুক, তার নিরুত্তাপ রক্ষণশীল মতিগতিকে অবজ্ঞা করুক, তার একাগ্ৰ নিষ্ঠা, নিরুপদ্রব সহনশীলতা, দুঃখী মায়ের জন্য তার ভালবাসা, এসবের জন্য খানিকটা শ্রদ্ধা তাকে সীতা বরাবর দিয়ে এসেছে। আজ যেন সে শ্ৰদ্ধাও সে রাখতে পারছে না মনে হয়েছিল হেমন্তের, তাকে যেন সহ্য করতে পারছে না। সীতা । “অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত বৈ কি।” “তবে ?