পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե8 মানিক গ্ৰন্থাবলী বীরত্বের ইঙ্গিত সে কেন করেছিল হেমন্ত জানে না। এই উদাহরণ দিয়ে তার বক্তব্য খুব সহজে স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে বলা যেত বটে কিন্তু সেটা অন্য ভাবেও दळ ८षड् । “আমি ভুলিনি ভালো ছেলে। কৃতজ্ঞ আছি।” ‘সেজন্য তুলিনি কথাটা’ হেমন্তকে বলতে হয়েছিল চাবুকের জ্বালা হজম করে, “আমার কথা শুনলেই বুঝতে পারবে । ও-ক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কর্তব্য ছিল, করেছিলাম। পরাধীন দেশে হাজার হাজার অন্যায় চলে, তার প্রতিবাদ করতে গেলে আমি দাড়াই কোথায়? দেশে চল্লিশ কোটি লোক, তার মধ্যে আমরা ক’জন লেখাপড়া শিখছি তুমি জানো । এ ক্ষেত্রে আমাদের ভাল করে লেখাপড়া শেখাটাই কাৰ্যকরী প্ৰতিবাদ, লডাই করা । শিক্ষিত লোকের কত দরকার দেশে, আমরা সামান্য যে ক’জন সুযোগ পেয়েছি, তারা নাই বা গেলাম হৈ-চৈয়ের মধ্যে ? সীতার চাউনিতে বোধ হয়। ঘুণাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল । “সব কিছু থেকে ও-ভাবে গা বাচিয়ে কারা লেখাপড়া শেখে জানো ভালো ছেলে ? দেশের প্রয়োজন, দেশের কথা যারা ভাবে তারা নয়, পাস করে পেশা নিয়ে নিজে আরামে থাকার কথা যারা ভাবে তারা । স্বদেশী মার্ক মালিকের পাপের ছুতো যেমন এই যুক্তি যে ইণ্ডাষ্ট্রীতেই দেশের উন্নতি, তোমাদের যুক্তিটাও তাই । ছাত্ৰ-আন্দোলোন যারা করে তোমার চেয়ে তারা ভাল করে লেখাপড়ার দরকার বোঝে । তারাই জোর করে বলে ছাত্রদের, ডিসিপ্লিন বজায় রাখা প্ৰথম কর্তব্য ছাত্রের, শিক্ষার যতটুকু সুযোগ আছে প্ৰাণপণে তা গ্ৰহণ করতে হবে প্ৰত্যেক ছাত্ৰকে, পরীক্ষায় পাস করাটা মোটেই অবহেলার বিষয় নয়। তাই বলে জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোন যোগ থাকবে না ? তারা প্ৰকাশ করবে: না। তাদের রাজনৈতিক মতামত, সঙ্ঘবদ্ধ হবে না। তাদের দাবি, তাদের ক্ষোভ, তাদের দেশপ্রেমের প্রকাশকে জোরালো করে তুলতে ? “তার ফল তো দেখতেই পাচ্ছি। ছাত্র-জীবনে ৷” "তার ফল ? ছাত্রদের মধ্যে দলাদলি বেড়েছে, দুর্মতি বেড়েছে ? সেটা কিসের ফল হেমন্ত ? দেশকে ভালবাসার, স্বাধীনতা দাবি করার ; ছাত্রদের এক করার আন্দোলন চালানো, এ সবের ফল? তলিয়ে যা বোঝবার চেষ্টা পৰ্যন্ত কর না, কেন তা নিয়ে তর্ক কর ? খারাপটাই দেখিছো, অথচ তার কারণ কি বুঝতে চাও না, মন-গড়া কারণ, মন-গড়া দায়িক খাড়া করে তৃপ্তি পাও- আমার কথাই