পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী পরে দাফন কাফন সারতে হয়েছিল তার নিজের মায়ের। না খেয়ে মা তার মরেন নি, আসুখে মারা যান। আকস্মিক এ আঘাতেও সে কাবু হয়নি, কোমর বেঁধে উঠে-পড়ে লেগেছিল গাঁয়ে একটা রিলিফ সেন্টার খুলতে । হঠাৎ এক দিন তার কাছে হাজির হয়েছিল। জিয়াউদ্দীন, শ্ৰীচপলাকান্তের নীয়েবজাতীয় স্থানীয় কর্মচারী। গায়ের শতকরা আশি জন প্ৰজা মুসলমান। আসল নায়েব নকুড় ভট্টাচাৰ্য, শাসন চালায় জিয়াউদ্দীন - শত অত্যাচার চালালেও কেউ যাতে না বলতে পারে যে হিন্দু অত্যাচার করেছে মুসলমানের ওপর। “এ গায়ে রিলিফ সেণ্টার কেন ? অন্য কোথাও কর গিয়ে । কত্তা বলেছেন, ও-সব হাঙ্গামা এখানে চলবে না ।” খেতে না পেয়ে গাদা গাদা লোক মরছে, তাদের কয়েকজনকে কোন মতে জীয়ন্ত রাখার চেষ্টার নাম হাঙ্গামা ! আসিল কথা ছিল ভিন্ন। গায়ে রিলিফ সেণ্টার হলে, মানুষ বাচানো আন্দোলন চললে, বাইরের নজর এসে পড়তে পারে চিরবাগীর ওপর । জমিদারীর আয়ে চলে না, তাই শ্ৰীচপলাকান্ত কারবার করছিল। অন্যায় অনাচার নোংরামি মজুতদারী চোরা কারবার এ সমস্তের কি কার কাছে ধরা পড়ে কে জানে ; ঘুষ খায় না। এমন অফিসার এক জনও যে নেই তাই বা কে বলতে পারে । তবু রম্বল থামেনি। চালা তুলেছিল, খাদ্য যুগিয়েছিল, ভলান্টিয়ার গড়েছিল, — নিজে পেছনে থেকে। খিচুড়ি বিতরণ আরম্ভ করার আগের দিন বিকালে লালদীঘির ধারের মাঠে সভার আয়োজন করেছিল - নিজে পেছনে থেকে । দুভিক্ষপীড়িতদের বঁাচাবার উদ্দেশ্যে ডাকা সেই সভায় কি করে দাঙ্গ বেধেছিল রসুল জানে না, সভার এক কোণে দাঙ্গা বাধার সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে লাল পাগড়ীর আবির্ভাব হয়েছিল তাও সে বুঝতে পারেনি। লাঠির ঘায়ে কপাল ফাক হয়ে হাজার ফুলকি দেখে ঘুরে পড়বার ঠিক আগে এক লহমার জন্য লাল পাগড়ীর নীচেকার মুখটি সে দেখেছিল আজও সেই পৈশাচিক আক্ৰোশে বিকৃত মুখের ছাপ তার মনে আঁকা হয়ে আছে। কেন এ আক্রোশ ? কেন এ বীভৎস হিংসা ? জগতের কোন অন্যায়, কোন অনিয়মের সঙ্গে খাপ খায় না, এ যেন অন্যায়ের, অনিয়মেরও ব্যভিচার ! মাথা ফাটাবার হুকুম পেয়েছিল, মাথা ফাটক। ক্ষমতার দম্ভে প্ৰচণ্ড উল্লাস জাগুক মাথা ফাটাতে, তার মাথা তুলবার স্পর্ধায় রাগে ফেটে যাক কলিজা, সব সে মেনে নিতে রাজী আছে মানানসই বলে। কিন্তু সে-ই যেন যুগ যুগ ধরে অকথ্য অত্যাচারে