পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৰ্পণ ফ্যাকড়া বাধাতে এসেছ আমাদের মধ্যে। তোমাকে লোক যোগান দিতে জালাল মিঞার সাথে লড়াই বাধাব আমি । মুখে বলল, “হা, হঁয়, চেষ্টা করব বৈকি বাবু। তবে কি জানেন, বীরেশ্বরকে সবাই ডরায়। জালাল মিঞার সাথে বড় ভাব। ফের দেখুন, ধান কাটাও সুরু হয়ে গেছে-এই যা মুস্কিল আর কি ৷” ঝুমুরিয়া আর তার আশপাশের পাচনিখে, সাতাইখুনী, গদাধরপুর এসব গ্ৰাম থেকে যে কজন লোক পেল হেরম্ব তাদের সংখ্যা আঙ্গুলে গোণা যায়। এ যে শুধু বীরেশ্বরের প্রভাবে হল তা অবশ্য নয়, চার পাঁচটি গ্রাম দূরে থাক, শুধু ঝুমুরিয়ার সিকি ভাগ লোককেও বুঝিয়ে শুনিয়ে ভয় দেখিয়ে হুকুম মানাবার ক্ষমতাও তার ছিল। কিনা সন্দেহ । সময়টাই গেল হেরম্বের বিপক্ষে । ফসল কাটায় শুধু চাষীর নয় জমিদার, জোতদার, ভাগীদার, মহাজন সকলের স্বার্থই জড়িয়ে আছে। অন্য সময় হলে এক নিতাই চক্রবর্তী একদিনে বিশ ত্ৰিশজন লোক জুটিয়ে পাঠিয়ে দিতে পারত বন কাটতে, এখন সে তিনজন প্ৰায় অকেজো বুড়োকে পাঠিয়ে হেরম্বের মান ও নিজের কথা বজায় রাখল। বনটা বাড হলে বেশীদিন মোটা মজুরিতে কাজ করার সম্ভাবনা থাকলেও হয়তো অনেকে লোভে পড়ে কারে হুমকি না মেনে মাঠের কাজ ফেলে চলে যেত। কয়েকটা দিনের ডবল মজুরির লোভে যাদের সঙ্গে চিরদিনের স্থায়ী সম্বন্ধ তাদের চটানো অনেকেরই ভাল মনে হল না । বাইরে থেকে যারা এসেছিল। ধান কাটার মরসুমে মাঠের কাজ করতে, এখানে যাদের কেউ নেই, তারাই শুধু বন কাটতে গেল। এখানে যাদের ঘর। কিন্তু ফসলের সময় ছাড়া সারাটা বছর যারা বিদেশে জীবিকা অজন করে তারাও প্ৰায় কেউ হোরম্বের ডাকে সাড়া দিল না । হেরম্ব কিন্তু দায়ী করল বীরেশ্বরকে । যারা সাহায্য করতে পারত। তারাও যে মুখে তাকে কথা দিয়েও কাজের বেলায় অনুগত লোকজনকে বারণ করে দিয়েছে এবং এদের মধ্যে অনেকেই যে বীরেশ্বরের বিরুদ্ধে বেশ জোরালো বিদ্বেষ পোষণ করে, এসব হেরম্বের মনে এল না। বীরেশ্বর ছাড়া আর কেউ সোজাসুজি স্পষ্টভাবে তার বিরোধিতা করেনি বলেই এক বীরেশ্বরই দায়ী হয়ে রইল। তার মনে । শ্বশুরের কাছে সাহায্য চাইতে যাওয়ার ইচ্ছা হেরন্থের ছিল না । সেখানে সতীরাণী আছে। কিন্তু অন্যভাবে চেষ্টা করারও সময় ছিল না। শ্বশুরের SO