পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী পারেন।’-কৃষ্ণেন্দু হেসেছিল, “যদিও মহাপুরুষ নই, আমি একবার চেষ্টা করেছিলাম বৌদিকে বদল করে দলে টানতে। শেষে দেখলাম, সব কাজ বন্ধ করে অৰ্দ্ধেক জীবন বৌদির পেছনে লেগে থাকলে তবে যদি কিছু করতে পারি। তার চেয়ে বৌদি। যেমন আছেন তেমনি থাকতে দেওয়াই ভাল।” কৃষ্ণেন্দু নীরবে খেয়ে যায়। কতকগুলি কাজ কৃষ্ণেন্দু বড়ই আস্তে আস্তে অনেক সময় নিয়ে করে, তার মধ্যে খাওয়া একটা । তিন জনেই চুপচাপ । ঘুম ভেঙ্গে পুতুল এসে বাপের গা ঘেষে বসে পড়ে। পাতে তখন অবশিষ্ট আছে তিনটি পটােলের মোরব্বা। পুতুল গাল ঘষে কৃষ্ণেন্দুর বাহুতে। মুখ তুলে চেয়ে একটু হাসে। কনকও হাসে—“দুষ্ট মেয়ে ।” কৃষ্ণেন্দু মাথা নাড়ৈ । — ‘‘না ।” কনক বলে, “দাও না ঠাকুরপো আধখানা ভেঙ্গে ? তুমি যেন কি ?” কৃষ্ণেন্দু বলে, “না”। কনক বলে, ‘দাঁড়া পুতুল, আমি দিচ্ছি। তোকে ৷” আস্ত একটি মোরব্বা এনে সে বাডিয়ে দেয় পুতুলের দিকে, বলে, “নে। ধর।” পুতুল নড়ে না, হাতও বাড়ায় না। কৃষ্ণেন্দুর গায়ে ঠেস দিয়ে তেমনি ভাবে বসে থেকে একান্ত নিবিকার ভাবে বলে, ”খাব না তো ।” মুখ লাল হয়ে যায় কনকের। বাড়ানো হাত ধীরে ধীরে গুটিয়ে এনে সে মৰ্মাহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কৃষ্ণেন্দু বলে, ’খাও পুতুল, নাও । জেঠমা দিচ্ছে যে ? তখন পুতুল সাগ্রহে হাত বাড়িয়ে দেয়। হাতের মোরব্বাটি উঠানে ছুড়ে দিয়ে কনক উঠে চলে যায় ঘরে। পাতের একটি মোরব্বা মেয়ের হাতে দিয়ে কৃষ্ণেন্দু বলে, 'খেয়ে নিয়ে জেঠমাকে হাত ধুয়ে দিতে বলবে, কেমন ? মমতা মন্তব্য করে, “তোমার মনটা তো বড় দুর্বল কেষ্টদা ? দেবে না বলে আবার দিলে, বৌদির একটু ছেলেমানুষী অভিমান হয়েছে বলে ? ডিসিপ্লিন নষ্ট করলে ? কৃষ্ণেন্দু আনমনে বলে, ‘হ্যা, দুর্বল বৈকি। নিশ্চয় দুর্বল। মানুষের মনটা কি জানো- হঠাৎ সে সচেতন হয়,-“কি বলছিলে ? ডিসিপ্লিন নষ্ট করলাম ? ওইটুকু মেয়ের আবার ডিসিপ্লিন কিসের ?” め〉b-