পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী “তই যদি হয় ? সেবা করতে পারব না ভাবিছ তুমি ? ‘পারবে না কেন ? কিন্তু ভাল লাগবে কি না। তাই ভাবছি।” ‘তার মানে তুমি বলতে চাও ওদের জন্য আমার আসলে দরদ নেই ? ‘দরদ থাকাটাই সব নয়। মমু। হীরেনের জন্য তোমার দরদ কম নয়, কিন্তু ওর 5河(で|ー" মমতা অধীর হয়ে বলে, “এসব আজে বাজে তর্ক রাখো কেষ্টদা । কাল থেকে আমায় কাজে লাগিয়ে দাও।” সিগারেট ধরিয়ে কৃষ্ণেন্দু একটু ভাবে। “নিজের বাড়ী ফিরে যাবে না কেন মমু? তোমার বাবা কি দোষ করলেন ?? “তুমি বুঝতে পারছি না। হীরেন কি মনে করে জানো ? আমার বাবার অনেক টাকা আছে বলে আমার এত তেজ, কাউকে গ্ৰাহা করি না । তোমার মত হীরেনও বিশ্বাস করে না, আমি সত্যি কুলি মজুরকে ভালবাসি, ওদের জন্য প্ৰাণ দিতে পারি। বড় লোকের মেয়ে হয়ে জন্মে যেন মস্ত অপরাধ করেছি।” ' হীরেনের জন্য ? হীরেনকে মমতা দেখাতে চায়। তার মধ্যে ভেজাল নেই, সে খাটি সোনা ? কুষ্ণেন্দু জানে এটা খাপছাড়া কিছু নয়, দোষেরও নয়। মমতার পক্ষে। নিজেদের কক্ষচ্যুত করার সাধ মমতাদের এইরকম কারণ থেকেই জাগা স্বাভাবিক।) এরকম একটা অথবা কতগুলি সাধারণ কারণ না থাকলে নতুন আবেষ্টনীতে নতুন জীবনে নতুন সার্থকতা খুঁজবার কথাটা এদের মনেই বা পড়বে কেন। তার নিজের বেলাতেও ঠিক এই ব্যাপার ঘটে নি ? অভাগাদের চেয়ে তাকে বেশী টেনেছিল ওদের হয়ে লড়াই করার রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার, বাহদুরীর মোহ। তবু মানুষের কাছে অকস্মাৎ নৈর্ব্যক্তিক আচরণ প্ৰত্যাশা করার মত বোকামি যে কিছু নেই, কৃষ্ণেন্দু আজ যেন তা ভুলে যায়। মমতাকে তার মনে হয় নিজের মনের মােহের বাম্পে ফাপিয়ে তোলা ফানুষ। (মনে হয়, মমতাকে সে চিনতেই পারে নি। এতকাল-চিনতে চায় নি বলে। নিছক নিজের প্রয়োজনেই সে এই সুন্দরী শিক্ষিতা ভাবময়ী বুদ্ধি-বিলাসিনী বালীগঞ্জী ধাঁচের সাধারণ ধনীকন্যাটিতে অসাধারণত্ব আরোপ করে কাছাকাছি রেখেছে। সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর যেমন রেখেছে এই নিরালা গৃহের কোণে কনকের ঘরোয় স্নেহ যত্ন, পুতুলের মায়া আর ঘুমের বিশ্রাম, তেমনি রেখেছে। রূঢ় বাস্তবতার ঘষায় ছড়ে যাওয়া মনের জন্য মমতার সাহচর্যের মলম। মমতার মধ্যে যেটুকু খাপছাড়া সে S RR