পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী অনুভূতির—সব কিছুর খুঁত ! তার খাতিরে একটা দুটাে দিন সকলে সংযত হয়ে থাকে, অত্যন্ত রূঢ় ও স্থূল স্বরূপগুলির প্রকাশ চেপে রাখে কোনমতে, কিন্তু তারপর আর ধৈর্য থাকে না কারো। কতদিন থাকবে মমতা তারো তো ঠিক নেই, তার মুখ চেয়ে কঁহাতক মানুষ স্বভাব এড়িয়ে বঁচিয়ে ভদ্রভাবে চলতে পারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ? ঝগড়া, গালাগালি, হীনতা, স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, দুনীতি, মাতলামি সব একে একে আবিভূতি হতে থাকে সাময়িক ও সংক্ষিপ্ত অন্তৰ্দ্ধানের প্ৰয়োজন শেষ করে, সঙ্কোচের বাধা ঠেলে । y মমতা স্তম্ভিত হয়ে যায়। বুঝতে পারে, মাঝে মাঝে এসে আর মাঝে মাঝে কাছে ডেকে যাদের সে চিনত, এরা তারা নয়। ধরা এরা তার কাছে কোনদিন দেয় নি। নিজে সে যে পরিচয় নির্দিষ্ট করে দিতে চেয়েছে এদের জন্য, এর নিবিবাদে সেই পরিচয়ই গ্ৰহণ করেছে তার কাছে পরিচিত হবার জন্য ! বাছা বাছা দুঃখের কথা বলেছে, নিরীহ ভীরু হয়ে থেকেছে, সায় দিয়ে গেছে তার কথায় ও ইচ্ছায়। এদের সে যেমন ভাবতে চেয়েছিল এরা তাকে তেমনি ভাবতে দিয়েছে। কখনো প্ৰতিবাদ করে নি। নিজেদের আসল জীবন থেকে এমন একটি টুকরোও তার সামনে উপস্থিত করে নি, তার ধারণার সঙ্গে যা খাপ খায় না। কত কথাই এদের মত শত শত মেয়ে-পুরুষ বলেছে তার কাছে, তবু কেন যে কোনদিন কেউ নিজেকে চিনিয়ে দেবার জন্য একটি কথাও বলে নি, সেটাও মমতা এখন বুঝতে পারে। এরা জানে না পরিচয় দিতে। এরা জানে না পরিচয় দেবার প্রয়োজন। এরা মানেই জানে না পরিচয় দেবার । এরা জানেও না! নিজেদের পরিচয় কি ! কি সে ভেবেছিল এদের ! বঞ্চিত নিপীড়িত দুঃখী ও নিরীহ একদল মানুষ, ধুকতে ধুকতে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে প্রাণহীন ভোতা শূন্য জীবন যাপন করে। আঘাত পেলে কঁাদে, দু’হাত শূন্যে তুলে আকাশের দিকে মুখ করে বলে, ভগবান!— আবার ঝিমিয়ে যায়। অথচ চোখের সামনে আজ সে দেখেছে। এদেরই একটানা বিস্ফোরণের মত সংশয়হীন প্ৰাণপূর্ণ প্ৰচণ্ড সংঘাতময় আত্মঘাতী জীবনের লীলা । পাড়ার কয়েকটি বাড়ী ঘুরে এসে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। তার কাছে। আগে যেমন জানত তেমনি যেন হয়ে গেল ওসব বাড়ীর মানুষগুলি তার সামনে, জীবনটা তাদের চলে গেল নেপথ্যে-অন্য জগতের অপরিচিত মানুষের সামনে রুগ্ন শিশুরা যেমন যায় । ད། SV20