পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“দিদিমণি, আপনার মোটে কাণ্ডজ্ঞান নেই। ওদের কাছে আপনি হলেন আকাশের পরী, রূপকথার রাজকন্যে। এমনিতে কি ওরা ভাবতেও পারে আপনার হাতটি ধরার কথা ? কিন্তু আপনি যদি এসে গায়ে পড়ে যা তা সুরু করে দ্যান, মাথা ঘুরে যাবে না। ওদের ? ও আজ মদ খেয়েছে আপনার জন্যে। কদিন থেকে অস্থির চঞ্চল হয়ে ছিল, শ্ৰীপদ খাওয়াতে চাইলে না বলতে পারে নি। বাড়ীর সবাই জানে, আপনার মাথায় ছিট আছে। ভদ্রলোক আপনার রোচে না, মনের মত পুরুষ খুঁজতে আপনি এখানে এসেছেন, ওকে আপনার পছন্দ হয়েছে। নইলে ওর সঙ্গে এত কি হাসি মাসকরা আপনার ?” ‘হাসি মাসকরা ? আমি কারখানার কথা আলোচনা করেছি।” মমতার সকাতর ভাব দেখে রম্ভ হোসে ফেলে -"তা জানি । আপনার মন জানতে বাকী আছে আমার ? বড় বোক আপনি । আপনার মনে কি আছে এখানে কে জানতে যাবে ? এরা দেখবে আপনার ব্যাভার। কোন পুরুষের সঙ্গে ওভাবে কখনো দেখেছেন আমাদের কাউকে মিশতে ? পাচ সাত জনের সামনে করলেই হত আলোচনা !” রন্ত ঘরে গেল। ধূক ধূক বুক বেজে রাত্রি কাটল মমতার। সকালে যখন সূৰ্য উঠবে, সবাই জাগল, তখনও সে ঘুমে অজ্ঞান হয়ে রইল। ঘুম ভাঙ্গল শান্ত, স্তব্ধ মন নিয়ে। সব কাজ, সব উদ্যম, সবরকম নড়াচড়া আর চিন্তা ভাবনার বিরুদ্ধে গভীর বিতৃষ্ণ । আলস্যই শান্তি, আলস্যই জীবননিশ্চিন্ত মনে গা ঢেলে দেওয়া । শুয়ে থাকার আরাম কি নিবিড় ! মেঝেতে মাদুরে বসে কৃষ্ণেন্দু কথা বলছিল রম্ভার সঙ্গে। রম্ভ তাকে খবর দিয়ে ডেকে এনেছে। রম্ভা বলল। মমতাকে, “আপনার সাহস আছে। কত কাণ্ডের পর দরজা বন্ধ না করেই ঘুমিয়েছেন ? জরের রুগীর মত দেখাচ্ছে আপনাকে । বসুন, চা আনি । চা খেয়ে চাঙ্গা হয়ে নিন।’ রস্তা বেরিয়ে গেলে বিনা ভূমিকায় কৃষ্ণেন্দু বলল, “তোমায় তো যেতে হবে এখান থেকে ৷” ‘যেতে হবেই ? “তাই মনে হচ্ছে! এরা কেউ চায় না। তুমি এখানে থাকে। সবাইকে এমন চটালে কি করে বল তো ? SNO