পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী সান্নিধ্য শুধু ততটুকু মঞ্জুর করে, তাদের জীবনযাত্রার কলরব ঠিক ততটুকু কানে আসতে দেয়, যা বরদাস্ত করতে কষ্ট নেই, গৰ্ব আছে । বাড়ীর যে পরিমাণ স্থান এরা পেয়েছে। এদের দাবীর জোরে তা এদের প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশী। এত বড় বাড়ীতেও তাই অন্যদের স্থানের অকুলান হয়, বাস করতে হয় একটু ঘেঁষাৰ্ঘেষি কোনঠাসা হয়ে। অবশ্য তাও কি কম ভাগ্য ? নানা গভীতে, নানা প্রক্রিয়ায় বিচিত্র শব্দ তুলে এ বাড়ীর জীবনধারা বয়ে যায়। ভোর চারটে থেকে মানুষের ঘুমাই ভাঙ্গে বেলা দশটা, এগারটা পৰ্য্যন্ত । যাদের কাজ করতে হয় তারা কাজ আরম্ভ করে। আর যাদের কোন কাজ নেই তারা আরম্ভ করে সময় কাটাবার চেষ্টা,শুয়ে বসে হাই তুলে আডিডা দিয়ে গল্প করে তাস খেলে রেডিও শুনে। সাধারণ কথার একটানা গুঞ্জন ছাপিয়ে কাণে আসে ডাকাডাকি, ধমকানি, কলহ, ছোট ছেলের কান্না, ঠাকুর ঘরে আরতির শঙ্খ ঘণ্টা প্রভৃতি শব্দ। উপরের স্তরের মেয়েপুরুষদের জীবন সব সময়েই শ্লথ মন্থর, সকালের দিকে আরও ঝিমিয়ে থাকে। পুরুষেরা তবু লোকনাথের বিভিন্ন আপিসে মোটা বেতনে হাস্কা কাজের চাকরী করতে যায়, মেয়েদের কাজের অভাবটাই সাংঘাতিক। সকলের চেয়ে নিশ্চল জবুথবু ও শব্দহীন লোকনাথের তিরানব্বই বছরের বুড়ী মা, এদের অলস জীবনের চরম প্ৰতীকের মত । বাড়ীতে দু’বেলা সব চেয়ে সমারোহ হয় চারটি রান্নাঘরে । এক ঘরে লোকনাথ ও তার আপনজনের, এক ঘরে পরের পর্যায়ের সম্পকিন্তদের, এক ঘরে নিরামিষ এবং এক ঘরে বাকী সকলের । শেষের রান্নাঘরে অন্ন ব্যঞ্জনের বৈচিত্ৰ্য বিশেষ কিছু না থাকলেও পরিমাণটা হয় বিপুল। তবু সকলের শেষে যারা খায়, শেষে ছাড়া খাবার অধিকার যাদের নেই, তাদের প্রায়ই সব জিনিষ কম পড়ে। কোনদিন থাকে শুধু আধাপেটা ভাত আর একটু ডাল, কোনদিন থাকে শুধু দুটি শুকনো নুন্ন ভাত, কোনদিন কিছুই থাকে না। হিসেব করেই দেওয়া হয় সব জিনিষ, কিন্তু সেটা মাথা পিছু হিসেব, খিদের হিসেব নয়। পোষ্য পোষা নিয়ে বড় ছেলে হীরেনের সঙ্গে লোকনাথের একটু মতানৈক্য আছে। তবে হীরেনের পক্ষে অনৈক্যটা সম্পূর্ণ নীতিগত ব্যাপার। এই আবেষ্টনীতে মানুষ হওয়ার ফলে বাড়ীর অবস্থাটা তার এমন গা সওয়া হয়ে গেছে যে পরিবাৰ্ত্তন ঘটানোর বিশেষ জোরালো তাগিদ। واد