পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शञि (छ्दनौ লোক, নিরীহ, শান্ত, ভালোমানুষ। কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারলে এরা খুলী থাকে টাকার জন্য পাপ করার তাগিদ এদের মধ্যে নেই। আমি কয়েকজনকে জানি, বিয়ের পর কয়েকবছর এভাবে টাকা রোজগারের কথা স্বামীস্ত্রী কল্পনাও করতে পারত না । দু’তিনটি ছেলেমেয়ে হবার পর যখন আর উপায় রইল না। তখন বাধ্য হয়ে এই পথ নিল। এদের প্রবৃত্তি নীড় বঁাধবার, ভাঙ্গাবার নয়। শুধু ঘর গোরস্থালি বজায় রাখবার জন্য এসব মেয়ে পাপ করে, স্বামী মুখ বুজে থাকে। এতবড় পাপ হজম করে সুখে শান্তিতে সংসার করার সাধ্য তোমার আমার নেই, ওদের সয়ে যায়, গরীব কিনা। সব চেয়ে আশ্চর্য এইটুকু। ওই দিকটা বাদ দিয়ে এদের দ্যাখো, অবিকল আর দশটি গরীব গৃহস্থের মত জীবন কাটাচ্ছে, না জানা থাকলে দেখে কিছু টেরও পাবে না ; স্বামী বাজার করছে, রের কাজে সাহায্য করছে, কাজে যাচ্ছে, বৌ রান্না করছে, বাসন মাজছে, ছেলেমেয়ে মানুষ কবছে, স্নেহমমতা মান অভিমানের পালা চলছে, সব একরকম । ঘরকন্নাকে বড় করে পাপকে ছোট করে নিয়েছে বলেই বোধ হয় এটা সম্ভব ই য়েছে। পুরুষ যেমন কলকারখানায় গতির খাটিয়ে রোজগার করছে বৌও তেমনি গতির খাটিয়েই রোজগার করছে, সেটা পরপুরুষের আলিঙ্গন সইতে গতির খাটানো হোক, আর যাই হোক। ব্যাপারটা ওরা বোধহয় এই ভাবে নেয় ।” ‘সহরের বস্তিটস্তিতে এরকম ঘটে ।” ‘সহরের বন্তি ? গায়ে এমন কত দেখেছি। তোদের একটা ধারণ আছে সহরের বস্তিতে জগতের যত নোংরামি জডো হয়েছে, বস্তিত্ব বাইরে কোথা ও দারিদ্র্য নেই, দুনীতি নেই। গায়ে যারা সত্যি গরীব, সমাজের নীচুস্তরের জীব, তাদের মধ্যে কিছুদিন থেকে আয়, দেখতে পাবি বেঁচে থাকার জন্য তাদের ও নীতিব বঁাধন ক'ত টিল করতে হয়েছে । আমাদের দেশের দারিদ্র্যের চেহারা দেখিস নি । গড়পড়তা আমাদের কত রোজগার তার হিসেবটা পড়ে মাথা চুলকে শুধু ভাবিস, তাইতো, আমরা সত্যি বড় গরীব। গরীব হওয়ার মানে যেন শুধু গরীব হওয়া— আর কিছু নয়। ছেড়া কাপড় পরা, পেট ভরে খেতে না পাওয়া, কঙ্কালসার দেহ নিয়ে খুঁকতে ধুকতে বেঁচে থাকা—এই হল দারিদ্র্যের সম্পূর্ণ রূপ। দেশে যেন কয়েক কোটি গরু ছাগল বাস করে, ঘাস বিচালির অভাবে তাদের শুধু হাড়গোড় বেরিয়ে পড়ছে।--আর কিছু হয়নি।” Y8 R