পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকনাথ কয়েকমাস আগে একটি রঙের কারখানা কিনেছিলেন। কারখানায় যারা কাজ করত তাদের মধ্যে সাতজন ছিল মুসলমান, তিনমাসে একে একে তাদের তিনজনকে বিদায় করা হয়েছিল । কদিন আগে বাকী চারজনকে হঠাৎ তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে গোলমাল বাধার আগেই খবর পেয়ে কৃষ্ণেন্দু লোকনাথের সঙ্গে দেখা করেছিল। লোকনাথ অজুহাত দিয়েছেন, ওই সাতজন দল বেঁধে ঘোট পাকিয়ে নানা ভাবে কাজে অসুবিধা ঘটাচ্ছিল, তাহ তিনি ওদের ছাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন । ‘ঘেট পাকাচ্ছিল কেন ?

  • ওসমান আলির জন্য ।”

কারখানার আগে যিনি মালিক ছিলেন, তিনি নিজেই ছিলেন ম্যানেজার,- নামে । ওসমান আলি ছিল একাধারে তার সহকারী ও কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারিদের সর্দার। মালিক হিসাবেই হোক। আর ম্যানেজার হিসাবেই হোক আগেকার মালিক-ম্যানেজার সমস্ত ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন ওসমানকে, কারখানার কাজে সোজাসুজি হস্তক্ষেপ করতেন না । লোকনাথ কাঠের কারখানার হাঙ্গামার পর এখানে উমাপদকে ম্যানেজার নিযুক্ত করেছেন । আফিসে বসে ওসমানের মারফত উমাপদ ম্যানেজারি করলে কোন গোলমাল হবার কারণ ছিল না, যেমন কাজ চলছিল। তেমনি চলত, কিন্তু নিজের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ছেটে ফেলে, কারখানার উন্নতির চেষ্টা না করে, নিজের চোখে কাজ কর্ম না দেখে, পুতুল সেজে বসে থাকতে উমাপদ রাজী হল না। যুক্তির দিক থেকে, উমাপদের ম্যানেজারির বিরুদ্ধে ওসমানের বলবার কিছু ছিল না, প্ৰথম থেকে এই ব্যবস্থায় কাজ করে এলে তার ক্ষোভও জগত না। কিন্তু শুধু যুক্তি নিয়ে মানুষের চলে না, দায়িত্ব ও ক্ষমতা অকারণে আইনসঙ্গত ভাবে কেড়ে নিলেও মানুষ জালা বোধ করে । তাছাড়া কাগজে কলমে ম্যানেজার হবার আশাও ওসমানের ছিল। সে আই, এসসি পাশ করেছে, এতকাল কারখানায় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, তাকে ম্যানেজার নিযুক্ত করা অসঙ্গত হত না। তার বদলে তার মাইনে শুধু পাঁচটাকা বাড়িয়ে দেওয়া হল । »8\2