পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शांत्रिक ७jश्यकी লোকনাথ বললেন, “মুসলমান বলে একজনকেও তাড়াইনি কেষ্টবাবু। ওরা ভাল কাজ করছিল, আমার কাজ নিয়ে কথা । প্ৰত্যেকে দোষ করেছে, তবে বিদেয় দিয়েছি।” কৃষ্ণেন্দু বললে, “আপনি ভারি অন্যায় করেছেন।” লোকনাথ চটে গেলেন । কৃষ্ণেন্দু বলল, “গোড়ায় ওসমানের সঙ্গে বুঝাপড়া করে নেওয়া আপনার উচিত ছিল। নতুন ম্যানেজার আসবে, নতুন ব্যবস্থা হবে, ওসমানকে কি অবস্থায় কি কাজ করতে হবে, এসব ওকে আগে বলে দিতেন। সোজাসুজি এসব না করে আপনারা ওর সঙ্গে আরম্ভ করলেন লড়াই,- যেমন চলছিল। তেমনি চলতে দিলেন কিছুদিন, তারপর আস্তে আস্তে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ওকে অপদস্থ করতে লাগলেন। কি দরকার ছিল তার ? ভাবলেন বুঝি যে আপনার কারখানা, আপনার মাইনে করা লোক, যা ব্যবস্থা করবেন। তাই চলবে ? হীরেনকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণেন্দু ওসমানের খোজে গেল। খাল আর ট্রাম লাইনের মাঝামাঝি ওসমানের ছোট্ট পাকা বাড়ী, ট্রাম লাইন থেকে চওড়া যে গলিটা একে বেঁকে দক্ষিণে চলতে চলতে ক্রমেই সরু আর নোংরা হয়ে এ অঞ্চলের দরিদ্রতম মুসলমান পাড়ায় পৌচেছে, তারই ধারে । ওসমানের বাড়ীটি আগাগোড়া সাদা চুনকাম করা। পাশেই একটি পুকুর। পুকুরের অপর তীরে কতকগুলি ছোট ছোট খোলার বাড়ী কেমন যেন তিন দিকের বাড়ীগুলি থেকে পৃথক হয়ে আছে। ওখানে একদল ধাঙ্গড় বাস করে। একটী পাকা বাড়ীর পিছন দিকে উঁচু দেয়াল, খানিকটা আব্বজন ভরা পতিত জমি, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, এইসব মিলে এত কাছে রেখেও অন্য সব বাড়ী থেকে ধাঙ্গড়দের ঘরগুলিকে কত যেন দূরে সরিয়ে রেখেছে। ওসমান আগে গলি ধরে আরো এগিয়ে মুসলমান পাড়ার একটি খোলার ঘরেই থাকত। অবস্থা ভাল হওয়ায় খানিকটা তফাতে সরে এসে দেড় কাঠা জমি কিনে একতালা বাড়ীটি করেছে। এখানে দাড়ালে এই গলির মোড়ে ট্রাম রাস্তার উপরে উঁচু প্ৰাচীর ঘেরা বিস্তৃত বাগানের মাঝখানে একজন ধনী মুসলমান ব্যবসায়ীর প্ৰকাণ্ড বাড়ীর খানিকটা চোখে পড়ে। ওসমান হয়তো মবারক সাহেবের ওই বাড়ীটির পাশে ওইরকম আরেকটি বাড়ী তুলবার স্বপ্ন দ্যাখে তার এই একতলা বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে। è 88