পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী নিয়ে গেল। খাটে শুধু তোষকের ওপর রঙীন সুতোয় বোনা সস্তা চেক চাদর পাতা। খাটটি বহুকালের পুরানো, অতিরিক্ত বাহারের কাজ ও বাহুল্য নক্সায় ভরা। এখন রঙ চটে গেছে, নানা স্থানে মেরামত করা হয়েছে, একটি পায়া একদম বাদ দিয়ে সাধারণ কাঠের সাধারণ একটি পায় বসাতে হয়েছে। দেখলেই বোঝা যায় খাটটি নিলামে কেন । এ ছাড়া, ছোট একটি টেবিল, কাঠের একটি চেয়ার ও সস্তা একটি ক্যাম্প চেয়ার ঘরের আসবাব। ইটের ওপর কাঠের তক্তা বসিয়ে ঘরে তৈরী পাড়ের ঘেরাটোপ দেওয়া দুটি বাক্স একপাশে দেয়াল ঘেষে রাখা হয়েছে। দেয়ালে তিনটি ছবি টাঙ্গানাে, তিনটিই মাসিকপত্র থেকে সংগ্ৰহ করা । একটি নুরজাহানের, একটি রঙিন পাখীর, অন্যটি রক্তগোলাপ হাতে ওমর খৈয়ামের । বাইরে যে চেয়ারটি নিয়ে গিয়েছিল, ওসমান সেটিও নিয়ে আসে। ব্যস্তভাবে সে ঘরে বাইরে আনাগোনা করে, সমাদর জানানোর চেষ্টায় অর্থহীন কথা বলে । ছেলেমানুষের মত সে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। তার এই উত্তেজনার আসল কারণটি তখনো কৃষ্ণেন্দু অনুমান করতে পারে নি, একসময় সে হাসিমুখে অনুযোগ দিয়ে বলে, “অত খাতির করবেন না, আলি সা’ব। মুস্কিলে ফেলে দিচ্ছেন যে আমাদের ” বলতে বলতে সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল, বাইশ তেইশ বছরের একটি মেয়ে অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে ঘরে ঢুকছে। পাতলা ছিপছিপে গড়ন, মুখখান সুশ্ৰী ও কোমল, গায়ে কজি-হাতা জামা, পরণে ফিকে সবুজ শাড়ী, পায়ে জরি বসানো চটি। ঘরে ঢুকেই দ্বিধাভরে সে দাঁড়িয়ে পড়ল, তারপর আরও দু’পা এগিয়ে এল। মেঝের দিকেই সে তাকিয়ে রইল, একবার শুধু চকিতের জন্য তার গভীর কালো চোখের দৃষ্টি তাদের দিকে ঝিলিক দেওয়ার মত খেলে গেল। ওসমান পরিচয় করিয়ে দিল, 'ইনি আমার স্ত্রী। ইনি কৃষ্ণেন্দু বাবু, ইনি হীরেন। বাবু।” ব্যস্ত সমস্ত ভাব কেটে গিয়ে ওসমান এখন শান্ত ও গম্ভীর হয়ে উঠেছে। উৎকণ্ঠার সঙ্গে সে আমিনার ভাব-ভঙ্গি লক্ষ্য করে। আমিনার অবস্থা সে ভাল করেই বুঝতে পারছিল। ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত হাস্যকর হয়ে না যায়, এখন ওসমানের এই আশঙ্কা। বেশী কিছু আশা করে না সে আমিনার কাছে। পাচ ছ'মাস আগে কৃষ্ণেদুর বাড়ীতে তার বৌদিদি কেমন সহজভাবে তাকে অভ্যর্থনা У С о