পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৰ্পণ গলিতে ঢুকতেই কয়েকটা মুরগী উচ্চকিত হয়ে পালিয়ে গেল। গােলর দুদিকেই টিন আর খোলার ঘর, পুরানো এবং জীর্ণ। আবরু রক্ষার জন্য দু’পাশের বাড়ীতেই এখানে ওখানে জীর্ণ চটের পর্দা ঝুলছে। তবু দরজার ফাক দিয়ে ম'বুবের উঠানের খানিকটা চোখে পড়ে। সেখানে কতগুলি ঘুটে গাদ করা, কাছে শুয়ে হঁপাচ্ছে একটা লোমওঠা ঘেয়ো কুকুর । চোখ ফিরিয়ে নিতে কৃষ্ণেন্দু বা নজরে পড়ল, এদিকের বাড়ীর ঠিক সামনের ঘরখানার ভেতরে একটি পনের ষো- বছরের ছেলে এই অবেলায় পড়াশোনা করছে। ঘরটি খুব ছোট, ভেতরে আবছা অন্ধকার। বেড়ার গায়ে ছোট জানালাটিতে বঁাশের বাত বসানো । মাটির মেঝেতে চাটাইএর আসন পেতে ছেলেটি বসেছে, সামনে একটি কেরোসিন কাঠের চৌকো বাক্স হয়েছে তার টেবিল, তাতে কয়েকটি বই খাতা আর দোয়াত কলম। একটি বই খুলে অল্প আলোর জন্য বইয়ের পাতার ওপর ঝুকে ছেলেটি একমনে পড়ে চলেছে। বাড়ীটা নেওয়াজের। কৃষ্ণেন্দু আনমনে বঁাশের বাতা বসানো জানালার ফাকে অধ্যয়নরত ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইল। কার কাছে সে শুনেছিল নেওয়াজের ছেলে থার্ড ক্লাসে উঠেছে। এতদিন খবর নেয়নি কেন ? ম’বুব, আজিজ, নেওয়াজের গোলমালটা মিটেও মিটাল না। ওসমান বেলেঘাটার বসাকদের কারখানায় ঢুকেছে, এদের সাতজনকে লোকনাথের কারখানায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরা আর কোন গোলমাল করতে চায়নি, কিন্তু উমাপদ ছাড়বার ছেলে নয়, সে এদের পেছনে লেগেছে। এদের ফিরিয়ে নেবার ইচ্ছা তার ছিল না, কৃষ্ণেন্দু আর হীরেন লোকনাথকে বুঝিয়ে রাজী করানোয় সে আর কিছু বলতে পারে নি। সেই রাগটা সে ঝাড়তে আরম্ভ করল এই বেচারীদের ওপর। ওই ছোট কারখানার সামান্য ব্যাপারটা যে কতখানি গুরুতর হয়ে উঠেছিল, হিন্দু-মুসলমান মজুরদের মধ্যে ধৰ্মগত একটা বড় রকম হাঙ্গামা বাধাবার চেষ্টা তলে তলে আরম্ভ করে দিয়েছিল হিন্দু ও মুসলমান দুই ধর্মেরই কয়েকজন ওস্তাদ ব্যক্তি, সেটা বুঝবার ক্ষমতা উমাপদর ছিল না। বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করতে গিয়ে কৃষ্ণেন্দু ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল। লোকনাথের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বললেন, ‘কেইবাবু, দয়া করে হাঙ্গামা সৃষ্টি করবেন না।” সেদিন সকালে ভারতের হিন্দুদের স্বাৰ্থ রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গের লাভজনক S \)