পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী অপমান করার উদ্দেশ্যেই হয়তো কৃষ্ণেন্দু ভুলিয়ে-ভালিয়ে হীরেনকে সভায় এনে হাজির করেছে। হীরেনও প্ৰথমে কল্পনা করতে পারেনি তাকে ডেকে এনে কৃষ্ণেন্দু এভাবে অপদস্থ করবে। তারও ধারণা ছিল, সকলের অভিযোগ শুনে প্ৰতিকারের ব্যবস্থা করবে বলে সে কথা দেবে, এইটুকু কৃষ্ণেন্দু তার কাছে। আশা করে। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে যতই সে অস্বীকার করুক তাকে দিয়েই কৃষ্ণেন্দু যে একটা মীমাংসা করিয়ে ছাড়বে, তাও হীরেন জানত। প্ৰথমে অসহ বিস্ময় জাগল, তারপর অপমানে দুটি কান ঝাঁ ঝা করতে লাগল। কৃষ্ণেন্দুর দ্বিধা নেই, সঙ্কোচ নেই। লোকনাথ বা উমাপদর নিন্দায় যেন হীরেনের কিছু এসে যায় না, তার সামনে কারখানায় স্ট্রাইক শুরু করার পরামর্শ করতে যেন বাধা নেই, সে তাদের লোক, সে বিভীষণ । আগেও অনেকবার মনে হয়েছে, এখন আবার হীরেনের মনে হয়, এই অত্যধিক লম্বা,হাডিসার কুদর্শন পুরুষটি তার সবচেয়ে নির্মম, সবচেয়ে হিংস্ৰ শত্ৰু, এমনিভাবে ফাদে ফেলে তাকে আঘাত করার তীব্র আনন্দের জন্য দিনের পর দিন তার বন্ধু হয়ে থাকে। নিকটতম, প্ৰিয়তম বন্ধু। হৃদয়মন রামময় করে রাখতে চেয়ে, রামের হাতে মরতে চেয়ে, রাবণ রামের শক্রি হয়েছিল। সেও শক্রিতার ভাণ করেনি। জগতের ধনী আর সুবের প্ৰতিনিধি হিসাবে সব সময় তাকে ঘূণা করতে চেয়ে, তাকে আঘাত করার আনন্দ চেয়ে, কৃষ্ণেন্দু নিজেকে তার মিত্র করেছে। 'চুপ কর! ষ্টুপিড, রাস্কেল, চুপ কর বলছি।” হীরেন উঠে দাড়িয়েছে। আকস্মিক স্তব্ধতায় কৃষ্ণেন্দুর বিস্মিত প্রশ্ন কি যে কর্কশ শোনালো বলবার নয় : “কি হয়েছে ? হীরেন। তার প্রশ্নের জবাব দিল না। উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করে বলল, “শোন বাপু, সকলে মন দিয়ে শোন। এসব বাজে ছেলেমানুষী বুদ্ধি ছেড়ে দাও। ম্যানেজার বাবু তোমাদের কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না।” কৃষ্ণেন্দু বলল, “তুমি যদি সেটা করে দিতে পাের, তাহলে তো ভালই হয়।” এ মন্তব্যও হীরেন। কানে তুলল না। ম’বুব সকলের সামনে বসেছিল, তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাকেই জিজ্ঞাসা করি ম’বুব। দু'তিন মাস ধরে কারখানায় তোমরা নানা রকম গোলমাল করেছিলে, ম্যানেজার বাবুর যদি একটু রাগ হয়ে থাকে তোমাদের ওপর, সেটা কি অদ্ভুত ব্যাপার কিছু ? আবার যখন S. GV