পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী করে ওঠে, বাড়ীর ঘরে ঘরে অন্য মেয়েদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়, পাড়ায় খবর রটে যায়, সেই তিনি এসেছেন । মেয়েটি তাকে ঘরে নিয়ে বসাতে না বসাতে বেঁটে ফন্স নিরীহ একটী লোক হাজির হয়। আনন্দ জানায় না, উচ্ছাস প্ৰকাশ করে না, একবার জিজ্ঞাসাও করে না কেমন আছেন। কাল যেন তার হীরেনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল । তারপর সে ফিরে গিয়ে মদ পাঠাতে থাকে, ছোট বড় নানা আকারের নানা বোতলে । একে একে পাচ সাতটী দিন কেটে যায়, হীরেন বাড়ী ফেরে না, এ বাড়ীর বাইরেও পা দেয় না। মেয়েটীর ঘরে মদ খায় আর ঘুমায়, ঘুমায় আর মদ খায়। দু’একদিন কাটবার পরেই কয়েকটি বিশিষ্ট বন্ধু কি ভাবে যেন আন্দাজ করে নিয়ে আসা শুরু করে, কোন কোনদিন সন্ধ্যার পর মেয়েটির ঘরে ডজনখানেক মানুষের সমাবেশ পর্যন্ত ঘটে যায়। নিরীহ বেঁটে লোকটি ইতিমধ্যে একবারও দেখা দেয় না । দুপুরে হোক, সন্ধ্যায় হোক, রাত্রি তিনটেয় হোক, খবর পাঠানো মাত্র বোতল পাঠিয়ে দেয়। তারপর খবর আসে কৃষ্ণেন্দুর কাছে। খবর যে দিতে আসে তাকে কৃষ্ণেন্দু গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করে, “আর দু’চার দিন চালালে মরবে মনে হয় ? যদি মরতে পারে দু’চার দিনে, তবে কটা দিন পরেই যাব।” আধঘণ্টার মধ্যে কৃষ্ণেন্দু মেয়েটির ঘরে গিয়ে পৌছয়। হয়ত দেখা যায় মেয়েটি তার চেনা, আগেও দু’একবার এর ঘর থেকেই হীরেনকে সে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে । “কখানা গয়নার দাম তুললে ভাই? কুষ্ণেন্দু তাকে জিজ্ঞেস করে। “বন্ধুকেই শুধোন না ?’ মেয়েটি হাসে, “মদের দেনা দাড়িয়েছে।” “মদের দেন, তোমার দেন, সব মিটিয়ে দেবে তাই, ভেবোন ।” “তা দেবে। আনা পাই হিসেব করে দেবে । মদের দামের একশো ভাগের এক ভাগ যদি আমি বখশিস চাই, বলবে, তোমায় দেবো কেন ? তুমি তো কমিশন পাবে।’ বলে তুড়ি দিয়ে মেয়েটি মুখে শব্দ করে, “ফুস!” হয়তো কয়েক ঘণ্টার বিরাম গেছে, হীরেনের নেশা তখন কম। কৃষ্ণেন্দুকে দেখে বালিশ থেকে মাথা তুলবার চেষ্টা করে সে শুধু হাসে। খাটে উঠে জোড়াসন হয়ে বসে কৃষ্ণেন্দু বলে, “কিরে হতভাগা !” “শনি এলে তো ?’ হীরেন বলে । S 7