পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘খুব বেশী নেবে কি ? বাজার মন্দা চলছে, ওরা অন্য কাজ কমিয়ে দেবে। আপনার কার লাভ দেখছেন বুঝতে পারছি না।” “আপনি বুঝবেন না।” এই সময় ঝুমুরিয়া থেকে বীরেশ্বর একদিন তার সঙ্গে এসে দেখা করল। তার সাহায্য ও পরামর্শ চায় । গ্র্যাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে একটা পাকা রাস্ত শ্ৰীনাথপুর হয়ে সদরে চলে গেছে। মাইল দশেক পশ্চিমে খড়গপুরের পথ। শ্ৰীনাথপুর থেকে একটি নতুন রাস্তা ঝুমুরিয়ার পাশ দিয়ে নিয়ে খড়গপুরের রাস্তায় মিলিয়ে দেওয়া হবে। ঝুমুরিয়ার আগের ও পরের মাইল পাচেক পথ তৈরী করে দেবার কনট্রাক্ট হেরম্ব চক্রবর্তীর প অন্য কাজের ভিড়ে নিজে সে প্ৰথমে রাস্তা তৈরীর কাজটার দিকে বিশেষ নজর দিতে পারে নি, এতদিন কাজও এগোয় নি একেবারেই । সময় সংক্ষিপ্ত হয়ে আসায় হেরম্ব এবার প্রবল বেগে কাজ আরম্ভ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নানা অত্যাচার। রাস্তাবু বাকী অংশ যারা ঠিকে নিয়েছে প্ৰথম থেকে আশেপাশের সঁওতাল কুলীদের তার কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল। হেরম্ব আসা মাত্র তারা কাজ ছেড়ে চলে গেছে। দূর থেকে লোক এনেও হেরম্ব কুলোতে পারছে না। ঝুমুরিয়া আর আশেপাশের গ্রামের তার প্রজাদের ধরে বেঁধে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে। যেখানে যার গরুর গাড়ী পাচ্ছে তাই দখল করছে। বর্ষার আগে এখন চাষের জন্য জমি ঠিক করতে হবে, জমি ফেলে রেখে বহু লোককে গাছ আর মাটি কাটতে হচ্ছে, গরুর গাড়ীতে রাস্তার মাল মশলা বইতে হচ্ছে। যেখানে একটু তফাৎ থেকে মাটি আনবার দরকার হয় সেখানে কাছাকাছি ফসলের জমি খুড়ে মাটি তোলা হচ্ছে, জমির মালিককে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে খিতে। কুলিদের জন্য কম দামে জবরদস্তি চাল কেনা হচ্ছে। এইরকম আরও অনেক কিছু। বীরেশ্বর এবং আরও কয়েকজনের সঙ্গে হেরম্বের বাড়তি ঠোকাঠুকি চলছিল। তাদের কিছু ভাল ডাঙ্গ জমি রাস্তার কবলে পড়েছে। চার বছর আগে যখন এই জমি কেনা হয়েছিল, চাষের যোগ্য দামী ডাঙ্গা জমি গণ্য করেই তখন দাম ঠিক হয়। পতিত মেঠো জমিকে চাষের জমি বলে ঘোষণা করার জন্য বীরেশ্বর এবং আরও তিনজনের নামে হঠাৎ নালিশ হয়েছে। হেরম্বর শ্বশুর জমিদার, সে স্বীকার করেছে। -এই জমিতে কোনদিন চাষ হত না । বীরেশ্বর যে দলিল-পত্ৰ দাখিল করেছিল। SVS (α) ο ο