পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¥ကျိရ তার অল্পশিক্ষিত মনের কল্পনা আশ্চৰ্যরকম উর্বর হয়ে উঠেছে। সামান্য ও সংক্ষিপ্ত বিবরণকে আশ্রয় করে তার মানসচক্ষে ঘটনা ও আবেষ্টনীর ছবি ফুটে ওঠে। আসন্ন সন্ধ্যায়। এই গেয়ে পরিবেশ, রম্ভার মনোবেদনার ছোয়াচ আর সেই সঙ্গে কল্পনায় আম জাম শাল পিয়ালের সবুজ দৃশ্যপটে দিনান্তের আবছা আলোয় মুখোমুখি দু’দল মানুষ । বীরেশ্বরের বাড়ীর দুয়ারে গাড়ী দাড়ানো পর্যন্ত রামপালের চােখের সামনে বীরেশ্বর কেবলি অতর্কিতে গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করতে লাগিল । গাড়ী থেকে নেমে রম্ভ বাড়ীর চৌকাঠ ডিঙিয়ে ভেতরে যাবার ক্ষণেক পরেই চার পাঁচটি নারী কণ্ঠে কান্না ধ্বনিত হয়ে উঠল। কার কাদে ? কেন কঁদে ? ও, বীরেশ্বরের মেয়ে, বৌ ও ছেলের বোরা শোক করছে। অন্যমন হওয়ার জন্য লজিত হয়ে রামপাল তাড়াতাড়ি গাড়ী থেকে নেমে পড়ল । পিঠা পিঠি দু’ভায়ের মধ্যে বয়সের তফাৎ যত কম হওয়া সম্ভব, শ্যামলাল ও জীবনলাল ততটুকু ছোটবড়, কিন্তু দু’জনের চেহারা থেকে সেটা অনুমান করা যায় ন। বত্ৰিশ বছর বয়সে শ্যামলাল ভুড়ি বাগিয়ে মাংসপেশী ঢ়িল করে মুখে ভারিক্কি ভাব এনে নিজের চেহারাটি দাড় করিয়েছে চল্লিশ পেরোনো গেরস্তের মত, জীবনলালকে তার চেয়ে অনেক ছোট দেখায়। বাপের মত তার শক্ত বঁধুনির জোরালো দেহ । শ্যামলাল রোগ এবং লম্বা । নতুন গোফ তার এখনো তামাকের ধোয়ায় বিবৰ্ণ হয়ে যায়নি। অশোচের খাওয়া, জামাই বাড়ী এলেও অল্পসময়ের মধ্যেই সংক্ষেপে সব চুকে গেল। বড়ঘরের দাওয়ায় চাটাই পেতে তারপর কথা বলতে বসল। রামপাল, রম্ভার তিন ভাই এবং তাদের খুড়ো কাশীশ্বর। ছোট কলাবাগানটির ওপাশেই কাশীশ্বরের ঘর। তার অপরিপুষ্ট শীর্ণ দেহে আর পরণের ছেড়া ময়লা কাপডে দারিদ্র্যের ছাপ আতি স্পষ্ট। একটু ভাল অবস্থার ভাইপোদের সঙ্গে বসে আলাপ করার ভঙ্গিটাও খাপছাড়া রকমের বিনয়াপন্ন । খুঁড়োর দিকে পিছন ফিরে বসে তামাক টানতে টানতে শ্যামলাল ধীরে ধীরে গোড়ী থেকে সমস্ত ব্যাপারের ইতিহাস রামপালকে বিশদভাবে শুনিয়ে দিল । শুনতে শুনতে রামপালের মনে হল, সে যেন একটু হেরম্ব চক্রবর্তীর দিকে টেনে কথা কইছে, একেবারে সমর্থন করতে না পারলেও খুব বেশী দোষ দেখতে পাচ্ছে না লোকটার। আহা, হেরম্ব চক্রবর্তী কি আর ভালমানুষ দেবতা, তা বলছে না। 8 ዓ\9