পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

# ဂျီရ၊ আটজনেই অবশ্য হেরম্বের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল। কিন্তু সেদিন ঘটনাস্থলে সকলে তারা উপস্থিত ছিল না। শ্যামলালদের তিন ভাইকে কেন যে ধরা হয়নি এটা বড় আশ্চৰ্য ব্যাপার মনে হয়েছে সকলের । শ্যামলাল সেদিন গায়েই ছিল না। সত্য কিন্তু বৈকুণ্ঠ দাসও তো ছিল না। গাঁয়ে, তাকে দু’দিন পরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জীবন ও মোহন বাপের সঙ্গেই ছিল, ওদের দু’জনকে পুলিশ অনায়াসে ধরতে পারত। সত্য কথা বলতে কি, বীরেশ্বরের ছেলেরা রেহাই পাওয়ায় গায়ের লোক, বিশেষ করে যাদের ধরা হয়েছে তাদের আত্মীয়স্বজন, তাদের ওপর নাকি একটু চটে গেছে। পুলিশের এই পক্ষপাতিত্বের মানে তারা বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরে দু’একজন করে গ্রাম থেকে আটদশজন লোক এসে বীরেশ্বরের ঘরের দাওয়ায় জড়ো হল। তাদের মধ্যে কেউ কৃষ্ণেন্দু কবে আসবে জানতে এসেছে, কৃষ্ণেন্দু এসে পড়েছে শুনে কেউ এসেছে তার সঙ্গে দেখা করতে। সকলে উদগ্রীব হয়ে কৃষ্ণেন্দুর প্রতীক্ষা করছে টের পেয়ে রামপাল একটু আশ্চর্য হয়ে গেল। গ্রামে কৃষ্ণেন্দুর যাতায়াত খুব বেশী নয়, গ্রামের লোকের ওপর তার এতখানি প্রভাব সে কল্পনা করতে পারেনি। অনেকদিন থেকে মুখে মুখে কৃষ্ণেন্দুর বিষয়ে নানা কথা গ্রামে রটেছে, তার সম্বন্ধে গ্রামের লোকের ধারণা গড়ে উঠেছে সেই সব শোনা কথাকে ভিত্তি করে। কৃষ্ণেন্দুর অসাধারণ বিদ্যাবুদ্ধি ত্যাগ ও ক্ষমতায় এদের বিন্দুমাত্র অবিশ্বাস নেই, কল্পনায় বড় হতে হতে ক্লষ্ণেন্দু এদের কাছে প্ৰায় মহাপুরুষ হয়ে উঠেছে। সকলের কথায় এই মনোভাবটাই প্ৰকাশ পেতে লাগল যে কৃষ্ণেন্দু একবার এসে পড়লেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যেখানে থেকে যাদের জন্য কৃষ্ণেন্দু কাজ করছে এদের মত শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস তাদের মধ্যেও রামপাল কখনো দেখতে পায় নি। নিজেদের গোলমাল মিটিয়ে দেবার ভার রূষ্ণেন্দুর হাতে তুলে দেবার জন্য এমন আগ্রহও তাদের দেখা যায় না। মন দিয়ে সকলের আলাপ আলোচনা শুনতে শুনতে একটা ব্যাপার রামপাল টের পেয়ে গেল। কৃষ্ণেন্দু এসে হেরম্বের অন্যায় অত্যাচারে প্রতিশোধ নেবার ব্যবস্থা করবে বলে সকলে তার পথ চেয়ে নেই। অত্যাচার যা হয়ে গেছে তার প্ৰতিকারের জন্য সকলে তারা বিশেষ উৎসুক নয়। আর যেন অত্যাচার না হয়, শান্তিতে ও স্বস্তিতে তারা যেন দিন কাটাতে পারে, এইটুকু শুধু সকলে চায়। ক্লষ্ণেন্দু এসে এ ব্যবস্থাটুকু করে দিক। S