পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণেন্দু আর হীরেন যখন বীরেশ্বরের বাড়ী পৌছল। তখন বেলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফা চ্যায়েও আদা দেওয়ার জন্য রামপাল নিন্দে করছে গ্ৰাম্য রুচির । কথার অনিবাৰ্য অপচয় যথাসম্ভব সংক্ষেপে চুকিয়ে দিয়ে কুষ্ণেন্দু কাজের কথা পড়ল। ‘সবার আগে তোমাদের সঙ্গে দু’চারটে কথা কয়ে নেওয়া দরকার মনে করছি শ্যামলাল । তোমাদেরি সর্বনাশ হয়ে গেছে বেশী । তারপর অন্য সকলের সঙ্গে আলাপ করব ।” “আজ্ঞে হঁ্যা। চ’টা আনিয়ে দি কিছু ? “গাড়ী থেকে নেমে স্টেশনে আমরা খেয়ে নিয়েছি, ওসব নিয়ে ব্যস্ত হ’য়ে না । তোমরা কি করবে। ঠিক করেছ ?” 'কিছুই ঠিক করি নি।” “কিছুই না ? কোন পরামর্শ হয় নি তোমাদের ? “আজেন্ত না । আপনার পথ চেয়ে ছিলাম।” কৃষ্ণেন্দু অসহিষ্ণু হয়ে বলল, “নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কর নি, একি একটা कश। श्ल ? হীরেন বলল, “আহা, অতি কথার মারপ্যাচ ধ’রো না । সেরকম পরামর্শ হয়েছে বৈকি, অনেক হয়েছে। ও বলতে চায়, পরামর্শের কোন ফল হয় নি।” শ্যামলাল কৃতজ্ঞ হয়ে বলল, “ঠিক বলেছেন বাবু। আপন! আপনির ভিতরে উই ছাড়া কি কথা আছে মোদের, কিন্তু কথা কয়ে থই মিলছে না কো ।” কথা কয়ে রূষ্ণেন্দুও থই পাবে মনে হল না। বাপের মৃত্যুকে এরা তিন ভাই কি ভাবে গ্ৰহণ করেছে, সেই অত্যাচারের কিরকম প্ৰতিকার এর চায়, সে জন্য কতখানি ত্যাগ স্বীকার করতে এর রাজী আছে, এসব মোটামুটি আন্দাজ করে নেবার ইচ্ছা কৃষ্ণেন্দুর ছিল । বহুক্ষণ চেষ্টা করে একটি স্পষ্ট ধারণা ও সে আয়ত্ত করতে পারল না । তিন ভাই কথা কয় তিন রকম, আবার ভিন্ন ভিন্নভাবে ধরলে প্ৰত্যেকের কথা উল্টোপাল্টা, পরস্পরবিরোধী, অর্থহীন। এখন একজন তার যে কথায় সায় দেয় একটু পরে একেবারে তার বিরুদ্ধ কথাতেও সে-ই আবার সর্বাঙ্গীন ১ সমর্থন জানিয়ে বসে। ক্রমে ক্রমে যখন গায়ের অনেকে এসে পৌছল এবং বিশেষ ভাবে বীরেশ্বরের মৃত্যুতে সীমাবদ্ধ না থেকে হেরম্ব চক্রবর্তীর অনাচার অত্যাচার সম্পর্কে সাধারণ ভাবে আলোচনা আরম্ভ হল। তখনও কৃষ্ণেন্দু কারো মনের কুলকিনারা খুজে পেল না। প্রতিশোধের বদলে নিছক প্ৰতিকারের ব্যবস্থাই যে >br>