পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী এরা তার কাছে প্ৰত্যাশা করছে, এটুকু বুঝতে অবশ্য তার রামপালের চেয়ে বেশী সময় লাগে নি। এটা বুঝতে তার ঝুমুরিয়া আসবার দরকার ছিল না, দূর থেকেই অনুমান করে নিতে পারত। বর্তমান অরাজকতায় যে অবস্থা দাড়িয়েছে। এদের দেহামনের, কোনরকমে শান্তিতে থাকার উপায় না খুজে লড়াই করতে চাইলেই এদের পক্ষে বিস্ময়কর হত । সে কথা নয় । আরও বেশী হাঙ্গামার ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাক, হেরম্বের প্রতি একটা নির্দিষ্ট মনোভাব তো এদের আছে ? ক্ৰোধ ক্ষোভ ঘুণা বিদ্বেষের জালা তো এরা অনুভব করে ? মনে মনে কামনা তো এরা করে যে হোরম্বের সর্বনাশ হোক, সে উচ্ছন্ন যাক ? সকলের এই মানসিক বিরুদ্ধতার গভীরতা আবিষ্কার করতে গিয়ে কৃষ্ণেন্দু যেন দিশেহারা হয়ে গেল। রাগ দুঃখ হিংসা দ্বেষ ক্ষোভ বিরক্তি অসন্তোষ সব আছে। এই মানুষগুলির মধ্যে, কিন্তু দু’ একজন ছাড়া-কমবয়সী দায়িত্বজ্ঞানহীন উত্তেজনাপ্রবণ দু’একজন ছাড়া, সকলেই যেন ক্ষমা করেছে হেবিম্বকে । বীভৎস রোগে অকথ্য যন্ত্রণা পেয়ে আজ যদি হেরঙ্গ মরে যায়, শিয়াল কুকুরে যদি টেনে ছিড়ে খায় তার দেহ, সকলের হাড়ে বাতাস লাগবে। তবু তাকে আঘাত করতে কেউ চায় না। জগৎ দাসের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। ছেলেটা হাঙ্গামার দিন বাড়ী থেকেই বার হয় নি, সন্দিজির হয়েছিল। জগৎ বলল, “দশঘর সঁওতাল প্ৰজা আছে, তাদের ছাড়িনি কে । সেই রাগে ছেলেটাকে ধরিয়েছে। বড় চড়া রাগ মানুষটার । চোখ যেন লাল হয়ে আছে জবাফুলের নাখান চব্বিশ ঘণ্টা । মাথাটাথা বিগডে যাবে এবারে, পাগলা হয়ে যাবে ; ঘরে বসে। ওসব তন্তর সাধন কি সয় মানষের, বিষয়ী মানষের, কারবার চলে ডাকিনী যোগিনী নিয়ে ।” বিপিন কুমার সায় দিয়ে বলল, “ঠিক কথা। মানুষটা, জানো কেষ্টবাবু, নেহাৎ মন্দ ছিল নাকে । ওই করে বেঠিক হয়ে গেছে গা মাথাটা।” শিবু, নন্দী সেদিন মারি খেয়েছিল, বঁ। হাতটা জখম হয়েছে। পুলিশের টানাটানির ভয়ে জখমের কথা সে কাউকে বলে না, সর্বদা গায়ে চাদর জড়িয়ে গোপন করে রাখে। শিবু বলল, “মোর কথাও তাই । বলি, সংসার যদি করবে তো সংসারী হয়ে সংসারে থাকো, না তো সন্নেসী হয়ে বনে শ্মশানে গিয়ে কর ওসব। রাতভোর মড়ার বুকে আসন পি ডি বসে থেকে ভোরে সিন্দুকের পয়সা গোণা, ও হয় না কো ।” আগেও আলোচনা বহুবার বিপথে চলাবার উপক্রম করেছিল, কৃষ্ণেন্দুর জন্য হয়ে ওঠে নি। এবার সে বাধা না দেওয়ায় পূরাদমে তন্ত্রমন্ত্র সাধনভজন সাধু St.