পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘আমি তো পারলাম না বুঝতে।” ‘হেরম্ব ধামিক বলে তাকে ওরা ঘটাতে চায় না ।” ‘হেরম্ব ধাৰ্মিক নাকি ?” "অতবড় একজন তান্ত্রিক সাধুর শিষ্য, নাম করতে লোকের গা ছম ছম করে। নিজেও নাকি সাধন টাধন করে, অমাবস্যার রাত্রিগুলি মড়ার বুকে আসন পিড়ি হয়ে কাটিয়ে দেয়। ওদের কাছে সে ভয়ঙ্কর ধামিক ৷” কৃষ্ণেন্দু থমকে দাঁড়াল। ডাইনে পথের ধারে মাইলের সংখ্যা লেখা মাটিতে পোতা শিলের মত পাথরটিতে কে যেন তেলসি দুর মাখিয়েছে। একটু দূরে পুকুরের ধারে ছোট একটি মন্দির,-পুরোণে, ভাঙ্গা এবং বটগাছে द्र । “তই হবে। ঠিক ? হীরেনের অনুমানে সায় দিয়ে হিংস্ৰ চোখে কৃষ্ণেন্দু তার দিকে তাকিয়ে থাকে । সিগারেট ধরিয়ে নিতে হীরেনের হাতে বার বার সিগারেটটা কেঁপে কেঁপে যায় । ‘আমি পারলাম না, তুই ধরতে পারলি কেন কথাটা এত সহজে ? “তুই ওদের সঙ্গে কথা বলছিলি, আমি ওদের কথা শুনছিলাম।” কৃষ্ণেন্দু বিমর্ষ ও চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। তার মুখের দিকে তাকিয়ে হীরেন অস্বস্তি বোধ করতে লাগিল । ‘দেশ সম্বন্ধে কতগুলি কথা তুই ভুলে থাকিস ভাই। ধর্ম আর সংস্কার যে এদেশের মন কি ভাবে গ্ৰাস করে আছে খেয়াল থাকলে কেন ওকে সকলে এত ভয় আর খাতির করে তুইও সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারতিস। এদেশে ধর্ম ছাড়া কথা নেই। চারিদিকে তার প্রমাণ তো দেখতেই পাস সর্বদা । ধর্মের দোহাই ছাড়া এদেশে রাজনীতি হয় না, আন্দোলন চলে না । এদেশে নেতাকে হতে হয় মহাত্মা । আধ্যাত্মিকতার স্তরে টেনে তুলতে না পারলে এদেশে কিছুই করার উপায় নেই। এটা তোরা ভুলে থাকিস। ধৰ্ম আর সংস্কারের কথা শুনলে অবশ্য তোরা বাস্তবপন্থীরা অসন্তুষ্ট হোস, কিন্তু যা আছে তা আছে।” কৃষ্ণেন্দু বলল, “অসন্তুষ্ট হই কিন্তু ভুলে থাকি না। উপেক্ষা করি। আমরা বলি, অন্নহীন, পরাধীন অত্যাচারিতের ধর্ম নেই। আমরা বলি, সমস্ত সংস্কার ভাঙ্গতে হবে ।” 7-8