পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্পণ ওঠে। ব্যাকুল হয়ে সে বলে, “এদের তুই জানিস না, বুঝিস না। এরা কি ভাবে, কেন ভাবে, কি চায়, কেন চায়,-কিছু না জেনেই তুই এদের নেতা হতে চাস । নিজের খেয়াল মত যা তা একটা কাণ্ড করে এদের সর্বনাশ করে বসবি ?” কৃষ্ণেন্দু বলে, ‘পাগল হয়েছিস ? আমি ইচ্ছে করে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধাতে চাইব ? ওটা কথার কথা বলছিলাম-যদি কোন কারণে হাঙ্গামা একটা হয়ে যায়, আমি যদি সামলাতে না পারি। আমার উদ্দেশ্য হল, সকলকে একত্র করে জোরালো আন্দোলন সৃষ্টি করা । মিটিং আর প্রসেসনটা যদি সফল হয়, একদিকে হেরম্ব ভয় পেয়ে যাবে, অন্যদিকে এদের ভরসা বাড়বে, জোর বাড়বে। ক্ষেপে আছে অনেকে, কিন্তু তারা আছে ছড়িয়ে-বীরেশ্বর ওদের একসঙ্গে আনতে পারেনি। মানুষটা রিগাঁচটা-দশজনের দাঙ্গা করার চেয়ে যে একশো জনের ধমকের জোর বেশী তা ও জানত না । এই কথাটাই মিটিং-এ ভাল করে। বুঝিয়ে দেব, কোনরকম হাঙ্গামা না করেও হেরম্বকে অনায়াসে কাবু করা যায়। আমি কি আশা করছি জানিস? যারা চুপ করে আছে, যারা ভয়ে রাস্তায় খাটছে, পরশু তারা আমাদের দলে আসবে ।” “কিন্তু "হেরম্ব যদি দাঙ্গা বাধায় ? প্রসেসনে কি বীরেশ্বরের মত রািগচটা কেউ থাকবে না ?”

  • সে ভয় তো আছেই ।”

হীরেন ভরসা পায় না। সে জানে, কৃষ্ণেন্দু আদর্শবাদী। নতুন যুগের পুরাণো আদর্শবাদী। তার মত মানুষের এরকম মনোভাব জাগলে ফলাফলটা ভাল হয় না । আদর্শবাদীর নিজেকে আঘাত না করতে পারলে স্বন্তি জোটে না কিছুতেই। কৃষ্ণেন্দু তাই করবে। ঝুমুরিয়ার লোকেদের কি উপকার হবে সেটা এখন জানেন। ভগবান, কৃষ্ণেন্দু ভয়ানক একটা কিছু করবেই। ७भव् ७धकत्रे আঘাত সে হেরম্বকে দেবে যার প্রতিঘাত অন্য কাউকে স্পর্শ করুক বা না করুক। তার গায়ে এসে লাগবেই। কলকাতা থেকে কৃষ্ণেন্দু গায়ে এল, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল দাঙ্গা । পুলিশকে বলে দিতে হবে না। কার জন্য দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গাটাও কৃষ্ণেন্দু ভালভাবেই বাধাতে চায়। দুপুরের রোদকে পর্যন্ত সে লোকের মাথা গরম করার কাজে লাগাবে। ‘ব্যাপার কি ভয়ানক দাড়াতে পারে ভেবেছিস ?” ‘ভেবেছি বৈকি। ওই ভয়ে তো চুপচাপ বসে থাকা যায় না ? SS