পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকনাথের সহজ চালটি ধরতে পারে নি। তাই বটে, কারখানায় কাজ বন্ধ করা এখন খুব কঠিন নয়, কিন্তু কয়েকদিন কাজ করার পর আস্তে আস্তে সকলের মাথা ঠাণ্ডা হয়ে এলে সেটা তো সহজ হবে না । তখন দুটো মিষ্টি কথা বলেই হয় তো লোকনাথ ব্যাপারটা মিটিয়ে দিতে পারবেন। মীমাংসার সৰ্ভ সম্পর্কে মোটামুটিভাবে প্ৰতিশ্রুতি না পেয়ে কাজ আরম্ভ করা তো ऐत्रिऊ ट्रंद बो । ন’টার আগে লোকনাথের সঙ্গে দেখা হবে না জেনেও রামপাল পরদিন সাতটার খানিক পরেই আবার তার বাড়ীতে গিয়ে হাজির হল । টের পেয়ে খুশী হল যে রম্ভাও তার অপেক্ষা করছিল। বীরেশ্বরের এখানে থাকতে আর ভাল লাগছিল না। ইতিমধ্যেই বাড়ীর একজন ড্রাইভারের সঙ্গে তার একচোট ঝগড়া হয়ে গিয়েছে। ড্রাইভারটিকে সে হয়তো মেরেই বসত। কিন্তু তার আগেই উমাপদ নিজে এসে ড্রাইভারটিকে ধমকে দেওয়ায় ব্যাপারটা বেশীদূর গড়াতে পারে নি। অতিথির মান আরও বাড়াবার জন্য উমাপদ বলেছিল, “তুমি বললে ওকে ডিসমিস করে দিই বীরেশ্বর ।” বীরেশ্বর তাতে একটু অপমান বোধ করেছিল। এরকম পিঠচাপড়ানো খাতির তার সহ হয় না । সে যেন অসহায়, অরক্ষিত মানুষ, উমাপদর অধীন। ড্রাইভারকে ধমকে বড়ই সে অনুগ্রহ করল তাকে । এরকম অনুগ্রহ উমাপদ তাকে আরও করবার চেষ্টা করেছে, তাতেও অপমান বোধ করেছে বীরেশ্বর। তাছাড়া, এখানে বড় বেশী পরাধীন শান্তশিষ্ট জীবন যাপন করতে হয়। লোকনাথের কাছে যে ব্যবহার আশা করেছিল তাও সে পায় নি। কোন ব্যবহারই f II মেয়ে সায় দিতেই সে ঝুমুরিয়া ফিরে যাবার আয়োজন করল। রম্ভারও এখানে বড় খারাপ লাগছিল। বড়লোকের বাড়ী বলেই প্ৰথম থেকে তার বিতৃষ্ণা জাগে নি, এখানে বাস করতে করতে তার অস্বস্তি বাড়ছিল। রামপালের সঙ্গে জানাশোনা হবার পর থেকেই তার কেবলি মনে হয়েছে যে সে শত্রুপুরীতে বাস করছে, অস্বস্তি যেন পরিণত হয়েছে বিদ্বেষে । RS