পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী রম্ভ বলে, “ওতে একদম ছেলেমানুষ কেষ্টবাৰু ? কৃষ্ণেন্দু বলে, “তোমার অন্য ভাইগুলি সত্যি মেয়েমানুষেরও অধম রম্ভ । মোহন সেরকম নয়। ওর মধ্যে খাটি জিনিস আছে।” রম্ভীর ভীত সন্ত্রস্ত করুণ মুখভঙ্গি দেখে হীরেন মনে মনে কৌতুক বোধ করে। গোড়ায় রম্ভার উদ্ধত ঝাঝালো তিরস্কারের অপমানে মনটা বেশ জ্বালাই করেছিল তখন। পরের জন্য সে বিপদ ঘাডে করতে চায় না, পুরুষ বলে প্যাচালো কথা কয়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে, তার সম্বন্ধে এই ধারণা পোষণ করে রম্ভ রস্তার ধারণা মিথ্যা নয় বলে, বিপদ সে সত্যই এড়িয়ে যেতে চায় বলে, রীতিমত বিচলিত হয়ে পড়েছে বলে, রম্ভার কথা ভুলে গেলেও জালাটা আত্ম-গ্লানি হয়ে জলছিল। এখন রম্ভাকে কাবু হতে দেখে হীরেন একটু আরাম পায়। ভাইকে রেহাই দেবার জন্য রম্ভ এবার নিশ্চয় কৃষ্ণেন্দুর হাতে পায়ে ধরে কঁদোকাটা শুরু করে দেবে। আড়ি চোখে রম্ভার ভাবভঙ্গি দেখতে দেখতে হীরেন। তার ভেঙ্গে পড়ার প্রতীক্ষা করতে থাকে। রম্ভ তিনবার ঢ়োক গিলে বলে, “গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।” হীরেন বিস্ফারিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। বন্ধুর দৃষ্টি দেখে কৃষ্ণেন্দু ভাবে সে বুঝি রম্ভার অপূর্ব দেহসম্পদ দেখছে। ভেবে কৃষ্ণেন্দু একটু বিরক্ত হয়। তারপর প্রথম সুযোগে হীরেনকে এক পেয়ে দিগম্বরী হাসিমুখে সামনে গিয়ে ছলছল চোখে জিজ্ঞেস করে, আপনি আমায় এত অবিশ্বাস করেন ঠাকুরপো ? ও বাড়ীর রাস্তাকে যেটুকু বিশ্বাস করেন, আমায় সেটুকু বিশ্বাসও করেন না।” “তা কেন বৌঠান, তা নয়।” ‘তাই ঠাকুরপো, তাই। কেন ঢাকছেন ? কোনদিন আপনার কাছে কোন অবিশ্বাসের কাজ তো করিনি। ঠাকুরপো আমি !” মুখে অল্প অল্প হাসি দিগম্বরীর লেগেই রইল, চোখের জল গাল বেয়ে নেমে এল সেই হাসিতে। হীরেন অবাক হয়ে চেয়ে রইল তার মুখে হাসিকান্নার এই অদ্ভুত সমাবেশের দিকে। মাথা চুলকে বোকার মত একটু হাসল। দিগম্বরী সোজাসুজি কেঁদে ফেললে সে এমন বিব্রত বোধ করত না । “কি জানেন বৌঠান, শুনুন বলি। রাস্তাকে যা বললাম। সে ব্যাপারে ও জড়িয়ে আছে, ওসব কথার সঙ্গে আপনার কোন যোগ নেই। আপনাকে অবিশ্বাস করি বলে গােপন করিনি।” აპაჯ2