পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘মমতার কথা নিয়ে তোর সঙ্গে কখনো আলোচনা করিনি। কেন জানিস ? হয় তুই ভাববি ওর হয়ে ওকালতি করছি, নয়। ভাববি আপোষ করিয়ে তোদের সুখী করার ইচ্ছায় যা মনে আসে বানিয়ে বলছি। আরেকটা কারণ ছিল। মমতা নিজেই ও ভারটা নিয়েছে। তোকে ও মানুষ করবে, তোকে সুখী করবে, নিজে সুখী হবে ।” “মানুষ করবে? ও আমায় মানুষ ভাবে না জানি। এটা জানিয়ে জানিয়েই তো আমায় মদ ধরিয়েছে, একধাপ এগিয়ে দিয়েছে মানুষ হবার পথে।” “এটা তুই ভুল করছিস হীরেন। তোর এই দিগম্বরী বৌদির মন্ত্ৰ ভক্তিভরে পদসেবা করে না বলে তোর অভিমান জাগে, করলে কিন্তু খুশী হবার বদলে ওকেই তুই অশ্রদ্ধা করতিস। মানুষ তুই চিনিস না। তোর মূল্যজ্ঞান নাই। এর স্বামীভক্তি দেখে ধাধা লেগে গেল ? এতো অন্ধ আবেগ মাত্ৰ ! ধাক্কা খেলে, অন্য পথ পেলে সেইদিকে চলতে আরম্ভ করবে। মমতা দেশকে ভালবেসে, সর্বহারাদের ভালবেসে, তবে তোকে ভালবেসেছে। ওর কোন কোন বুঝবার মধ্যে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু ওর মধ্যে ফাকি নেই, ও অনেষ্ট । তোর সঙ্গে সংঘাতটাই তার কতবড় প্রমাণ বুঝতে পারিস না ? ভুল বুঝতে পারলে ও সংশোধন করে নেয়, জোড়াতালি দিয়ে চালায় না । ওর মত জেদি একগুয়ে তেজী মেয়ে আজ কি ভাবে নিজেকে বদলে ফেলেছে বলতো ? তুই যতটুকু অধিকার দিয়েছিস ততটুকু বাইরের কাজ করে খুশী আছে—চব্বিশঘণ্টা যে কাজে ও মেতে থাকতে চায়। বাকী সময় তুই যেমন চাস তেমনি হয়ে চলছে— 'চলছে বৈকি। ধীর স্থির শান্তশিষ্ট হাসিখুশী উদার-আমার মাতলামির জন্য পর্যন্ত ক্ষোভ নেই, ক্ষমা করে চুকিয়ে দেয়।” “হীরেন তুই মিথুক । নরক থেকে তোকে তুলে নিয়ে যাবার পর আমার সামনে ময়ু কেঁদে ফেলছে—তুইও দেখেছিস।” “সে তো গায়ের জালার কান্না । আমায় মানুষ করতে পারছে না। বলে ।” কৃষ্ণেন্দু নিশ্বাস ফেলে বলে, “আমার বিশ্বাস ছিল মমতা পারবে। আজ খটকা লাগছে। মানুষকেই মানুষ করা যায়, তোর মনুষ্যত্ব নষ্ট হয়ে গেছে হীরেন।” একটু থেমে বলে, “মমুর জীবনটাও না নষ্ট হয় তোর জন্যে!” ‘কেন ? ওর কুলিমজুর আছে, দুদিন বাদে আরিফ ছাড়া পাবে। আমি তো R. o o