পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দপািণ "দিনে দিনে স্টেশনে পৌছে যাবেন। গরমকালে রাস্তায় সাপের ভয় ।” হীরেনের মনে হল, কোনরকমে শশাঙ্ক যদি মরে যেত। আর সে যদি দিগম্বরীর শোকটা দেখবার সুযোগ পেত । এই অদ্ভুত সাধের জন্য নিজের কাছেই হীরেন লজ্জা বোধ করল। কতগুলি অদ্ভুত প্রশ্ন তার মনে ভীড় করে আসছে, দিগম্বরীর স্বামীর ঘর করা সম্পর্কে কতগুলি প্ৰশ্ন, দিগম্বরীকে যা জিজ্ঞাসা করা যায় না । জবাবও হয়ত সে জানে না । কোন দিন ভেবেও দেখে নি। জীবনকে যাচাই আর বিশ্লেষণ করে দেখবার শিক্ষা সে পায়নি, প্ৰচলিত প্ৰথায় জীবনকে গ্ৰহণ করে সুখী হওয়াই তার স্বভাব। তবু দু’একটা প্রশ্ন না করে হীরেন পারল না । একটু তফাতে দাওয়াতে সে বসতে যাবে, দিগম্বরী ব্যস্ত হয়ে বারণ করে আসন এনে পেতে দিল । “আপনি কতদূর পড়েছেন বৌদি ? “আমরা মুখু্য-সুখু্য মানুষ ঠাকুরপো। বাংলা বইটই একটু যা পড়তে পারি।” “কি বই পড়েন ? “এই রামায়ণ মহাভারত। নাটক নভেল যদি কখনো পাই তো পড়ি । ‘নাটক নভেল কি পড়েছেন দু’একখানার নাম করুন না বৌদি ? “অত কি মনে থাকে। ঠাকুরপো ? দাঁড়ান, সেদিন একটা বই পড়েছি বটে, ত্ৰিলোচনবাবুর ‘সতীর জয়”। পড়েছেন ? সুন্দর বই, পড়তে পড়তে চোখে জল আসে। এক চরিত্রহীন লম্পটের সঙ্গে একটি মেয়ের বিয়ে হল, বিনা দোষে সন্দেহ করে স্বামী তাকে ত্যাগ করল। তারপর কত দুঃখ কষ্ট বিপদ আপদ প্ৰলোভনের সঙ্গে লড়াই করে শেষে মেয়েটি আবার সব ফিরে পেল। স্বামীর বসন্ত হয়েছিল, সবাই তাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল, মেয়েটি খবর পেয়ে এক যমের সঙ্গে লড়াই করে তাকে বঁচিয়ে তুলল। ওর স্বামী আবার ওকে গ্ৰহণ করল, সেই থেকে তার চরিত্রও শুধরে গেল। বইখানা পড়ে দেখবেন ঠাকুরপো।” “কিন্তু সংসারে কত অসতী মেয়েও তো কখনো দুঃখ কষ্ট না পেয়ে সুখে জীবন কাটিয়ে দেয় ।” “ছাই দেয়। আর দিলেই বা, এ জীবনটাই তো সব নয়, পরজন্মও তো ऊष्ट् |? ‘পরজন্মের কথা ভেবে বুঝি মেয়েরা সতী হয় ?” Re Q