পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী দিগম্বরী হেসে ফেলল। দিগম্বরীর হাসিটিও বেশ, পানে রাঙ্গা দাতগুলির জন্য বড় মোলায়েম আর মিষ্টি । হাসিমুখেই সে বলল, “সতীত্ব হল মেয়েদের ধর্ম। এমনিই তারা সতী হয়, ভেবে চিন্তে হয় না ঠাকুরপো ।” হীরেন একটা অস্পষ্ট জবাব দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই দিগম্বরী একটু ব্যাকুলতার সঙ্গেই বলল, “উঠছেন কেন, বসুন না একটু? আপনি বড়লোক মানুষ, গরীবের বাড়ী এসে খুব কষ্ট হচ্ছে, না ঠাকুরপো ? হীরেন আবার বসে জিজ্ঞেস করল, “কষ্ট হচ্ছে কে বলল আপনাকে ?” “একি বলে দিতে হয়। ঠাকুরপো ! পাড়াগায়ে থাকা তো উমভ্যাস নেই আপনাদের। না পাওয়া যায় একটা জিনিস না পাওয়া যায় কিছু। ওখানে আপনার কতগণ্ডা। চাকর বাকর, এখানে আমি গেয়ে মানুষ—” “আপনি যা আদর যত্ন করছেন বৌদি-” দিগম্বরী খুশী হয়ে বলল, “যান ! বাড়াবেন না ঠাকুরপো। আপনার স্ত্রী নাকি কটা পাশ দিয়েছেন ? তাই শুধোচ্ছিলেন, আমি কদার লেখাপড়া করেছি। ! আমার মত মুখু মেয়েমানুষ দেখে আপনার নিশ্চয় ঘেন্না হয়।” এমনি আলাপে দিগম্বরী অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে দিল । তার কথা আর সুরে বরাবর একটা চাপা সন্ত্রম আর ঈর্ষার ভাব হীরেনকে খুশী করে তুলেছিল। অতি সহজেই সে নিজেকে দিগম্বরীর ঘরোয়া সীমাবদ্ধ মানসিক স্তরে নামিয়ে নিয়ে আলাপ জমিয়ে তুলল। হাঁটু ভেঙ্গে মাটিতে বঁ। হাতের উপর ভর দিয়ে একটু কাত হয়ে দিগম্বরীর বসবার ভঙ্গী, ঠোঁটে পানের রসের শুকনো দাগ, কানের মাকড়ি, চােখের নম্রতা, চুল বাঁধার কায়দা এই সব লক্ষণ কখনো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কখনো মিলিতভাবে তাকে মনে করিয়ে দিতে লাগল, এই মেয়েটি সাধারণ, কিন্তু এ জগতে শশাঙ্ক ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই ওকে স্পর্শ করে। একগ্লাস জল চাইতে দিগম্বরী তাকে সরবৎ এনে দিল, তারপর আচমকা বলে বসিল, “একটা কথা বলব ঠাকুরপো ? ওঁর একটা চাকরী বাকরী করে দিন না ? কত চাকরি আপনার গড়াগড়ি যাচ্ছে। আপনি ইচ্ছে করলেই হয়ে যাবে ।” হীরেনের প্রথম মনে হল, কোনদিন কোন অবস্থাতেই দিগম্বরী বোধ হয় শশাঙ্কের কথা ভুলতে পারে না। এতক্ষণ যে তার সঙ্গে আলাপ করেছে তাও স্বামীর কথা ভাবতে ভাবতে করেছে। এক মুহুর্তে চিন্তার ভান করে হীরেন। বলল, R O 8