পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৰ্পণ লাগান ছোট আট দশখানা টিনের ঘর, অল্প খানিকটা জমির মধ্যে জমাট করা ঘরগুলির মধ্যে দু’হাত চওড়া গলিও আছে। বাইরে দু’তিনটি স্ত্রীলোক দেখা গেল। দেখলেই বোঝা যায়। তারা দেহের ব্যবসা করে, অতি গরীর এবং ছোট জাতের মেয়ে । খোপা বেঁধে ফুল গু জেছে, পান খেয়ে কাল ঠোঁট রাঙ্গিয়েছে, সেমিজ ছাড়াই সস্তা তাতের শাড়ী পরেছে, আর দাড়িয়েছে। ভঙ্গি করে, যে ভঙ্গি এদের অভ্যাস হয়ে যায় । কিছু দূরেই বান্দি পাড়া। দেখলেই চেনা যায়। বিশ্ব যাদের বর্জন করেছে, চারিদিকে অনেক খালি জমি পড়ে থাকতেও যারা একটুখানি জমিতে ছোট ছোট ভাঙ্গাচোরা কুড়ে তুলে গড়ে তোলে নিজেদের পাড়া, কত সঙ্কেত আর চিহ্নই যে থাকে তাদের সেই সীমাবদ্ধ জগতের ! মানুষ-সমান উচু পচা-খড়ের পুরানো কুড়ের লেপামোছা তকতকে একটুখানি মাটির দাওয়া, সেখানে সোনারঙের চেরা বঁশের শিল্প । এটা ঝামুরিয়ার এক প্রান্ত। পূর্বদিকে পথটা খানিক সোজা গিয়ে বেঁকতে বেঁকতে স্টেশন থেকে ঝুমুরিয়ায় ঢুকবার পথে মিশেছে। কতগুলি আলো দেখে ও লোকের কলরব শুনে হীরেন এগিয়ে গেল । চরণ সা’র মদের দোকান দেখে সে গেল ভড়কে । টিনের চাল আর মাটির দেয়ালের একটা ঘর, দেয়ালের গায়ে একটা ফোকর দিয়ে মদ বিক্রী হচ্ছে। এদিকে একটা চালার নীচে ছেড়া চাটাইয়ে বসে ক্রেতার সেই মদ খাচ্ছে। লোক মন্দ হয়নি। গ্রীষ্মের সন্ধ্যা হয় দেরীতে, সাড়ে আটটায় মদ বিক্রি বন্ধ । দিনের আলো শেষ হবার আগেই তাই অনেকে রাতের নেশার জোগাড়ে ছুটে আসে। কারো গায়ে সার্ট ফতুয়া, করো শুধু ধুতি বা লুঙ্গি, কারো শুধু গামছার মত ছোট আর ছেড়া কিছু কোমরে জড়ান। গেলাস, বাটি, টিনের মাগে কেউ মদ নিয়েছে, কারো পাত্রটি মাটির, কেউ বা তৃষ্ণা মেটাচ্ছে সোজা বোতল থেকে। বোতলওয়ালাদের সংখ্যা খুব কম। বোতলের জন্য পয়সা জমা রাখতে হয় । দেয়ালের ফোকর ঘিরে লোক ছিল, হীরেনকে দেখে ভয়ে বিস্ময়ে পথ ছেড়ে দিল। ফোকরের ওপাশের লোকটির ঘামে ভেজা ভুড়িটি শুধু দেখা যায়। ‘বিলিতি আছে ? “না: ৷ এক নম্বর আর দু’নম্বর পাবেন।” “কোনটা ভাল ? S 8(c)