পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী মমতার কথা ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছে । মমতা সতী না অসতী ভেবে ভেবে তার বাইের করা চাই—আজ রাত্রেই বার করা চাই। চুলচেরা হিসাব করতে হবে সব ঘটনার, মমতার কথাবার্তা আর চালচলনের। কৃষ্ণেন্দু কি যেন সব বলেছে মমতার সম্বন্ধে ? কথাগুলি তলিয়ে বুঝতে হবে। মমতা হয়তো ধোকা দিয়েছে কৃষ্ণেন্দুকে । যা চালাক মেয়ে মমতা !! আর কৃষ্ণেন্দুর মত বোকা তো জগতে নেই। বিদায় নেবার পালা শেষ হতে সময় লাগল। হীরেনকে বড় ভাল লেগেছে হেরম্বের, আরেকটু বসে যাবে না হীরেন, আরেকটু খাবে না ? মদ চেয়ে নিতে হীরেনের বড়ই সঙ্কোচ বোধ হচ্ছিল, হেরম্ব নিজেই কাগজ মোড়া দুটি বোতল রামপালের জিম্ম করে দিল । পথ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আপশোষ করে বলল, “কাল সকালেই যাবেন ভাই ? আরেকটা দিন থেকে যান না ?” “আমাকে যেতেই হবে ।” “তবে আর কি বলব । দু’চার দিনের মধ্যে আমিও যাচ্ছি। কলকাতা । আপনার বাবার সঙ্গে পরিচয়টা করিয়ে দেবেন।” ঝুমুরিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশের কোণে ডুবু ডুবু চাদ। কই, কষ্ট তো হীরেনের কমে নি! কড়া অচে আবেগের ভিয়ান চড়েছে, আঠার মত যেন ব্যথার তাপে মন জলে গেল। মমতার কথা ভেবে লাভ নেই, চুলচেরা হিসাবে ফল হবে না । মমতা ভাল হোক খারাপ হোক, কিছু তাতে এসে যায় না । সে জানে। তার মন জানে। মমতা তাকে ভালবাসে না, জগতের অন্য সব মেয়ে তাদের স্বামীদের যেমন ভালবাসে। দিগম্বরী যেমন পূজা করে তার স্বামীকে, স্বামী জ্ঞান স্বামী ধ্যান স্বামী সর্বস্ব করে জীবন কাটায়। কি অসহায়, বঞ্চিত জীবন হীরেনের, কি অকথ্য অদ্ভুত তার ভাগ্য ! কোন অভাব তার নেই, শুধু সেই জিনিসটি সে পেল না, সকলে যা আপনা থেকে পায়, বিয়ে করা স্ত্রীর শ্রদ্ধা ভালবাসা । শশাঙ্কের মত মানুষ যা পেয়েছে, তার কাছে সেই সুলভ সাধারণ জিনিস আকাশের ওই ডুবু ডুবু চাঁদটির মত অপ্ৰাপ্য। না, আরও অনেক মদ খেতে হবে । খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে পড়তে হবে। কৃষ্ণেন্দু বিরক্ত হবে, কিন্তু বাধা দেবে না । কৃষ্ণেন্দু তার ভীষণ যন্ত্রণার কথা জানে। যদিও সে মাঝে মাঝে বলে, এটা তার মাথার একটা দোষ, একটা RS7