পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

#းချိရ করে দিয়েছে তার গত রাত্রির উন্মত্ততার কথা। কিম্বা অন্য ভাবে প্ৰকাশ পেয়েছে ? হেরম্বের চাকর হয়তো গল্প করেছে। গায়ের কেউ হয়তো দেখেছে। গায়ের সবাই হয়তো জানে তার অপকীর্তির কথা-হোরম্বের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুর বন্ধুর দহরম মহরমের কাহিনী হয়তো ছড়িয়ে গিয়েছে দিগদিগন্তে । “চুপি চুপি ছুরি মারলেই হত কেষ্টবাবুর পিঠে ? বজাঘাত হয় না। আপনার মত লোকের মাথায় ? সাপে কামড়ায় না। আপনাদের ? কুষ্ঠ হয় না ?” শ্ৰীরেন প্ৰায় কাতর ভাবেই প্ৰতিবাদ জানায়, “তুমি বড বাড়াবাড়ি করছি রম্ভ । আমি মাতাল হতে পারি, বিশ্বাসঘাতক নই ৷” রম্ভ ব্যঙ্গ করে বলে, “নন? শত্তরের সঙ্গে চুপি চুপি ভাব করে বন্ধুকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া কেন বিশ্বাসঘাতকতা হবে! ও খুব ভাল কাজ।” হীরেনের মনে কথা জাগে : “আমার জন্য কেষ্টর এতটুকু ক্ষতি হয় নি রম্ভ। আমি শুধু হেরম্বের সঙ্গে মদ খেয়েছি’ কিন্তু মুখে তার শব্দগুলি উচ্চারিত হয় না। মনের মধ্যেই সে যেন রাস্তার ঝাঁঝালো জবাব শুনতে পায় : “তা বৈকি। বন্ধুর শত্তরের সঙ্গে, খুনের সঙ্গে বসেই তো লোকে মদ খায় ! বন্ধু যাকে শান্তি দেবে পরদিন, তার সঙ্গে রাত্তির বেলা চুপি চুপি আডিডা দিতে যায়।” হীরেন ধীরে ধীরে চলে যায়, রম্ভ তাকে শুনিয়ে বলে, “যান যান। কোথায় পালাবেন ? সবাইকে বলব আপনার কীতির কথা । কলকাতা গিয়ে চাদিকে রটাব, সবাইকে চিনিয়ে দেব। আপনি কেমন ধাবা লোক, যে যেখানে আছে।” কত কল্পনা নিয়ে আজ ঘুম ভেঙ্গেছিল হীরেনের। কি তেজ সঞ্চার হয়েছিল তার রক্তে, কি উৎসাহ জেগেছিল মনে, সব বাধা সরিয়ে কিভাবে উৎসারিত হয়ে উঠেছিল নিজের মধ্যে। ফিরে পেয়েছিল বিশ্বাস, পথ খুজে পেয়েছিল অভ্রান্ত আত্মোপলব্ধিতে। সব এখন ভেস্তে গেছে, ফেসে গেছে, চুপসে গেছে উবে গেছে। মমতা শুনবে তার এই অমার্জনীয় অপরাধের কথা । আরো বেশী তাকে ঘুণ করবে। মমতা । * না শুনলেই বা কি। তার মত অপদার্থ, অসংযত, কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষকে এমনিই ঘূণা করবে। মমতা । ঘূণা সে করছে-“চিরদিন করবে। ঘূণাটা মনের জোরে চেপে রেখেছে এখন, তার এই কাণ্ডের কথা শুনলে সেটা ধৈর্যের বঁাধ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে, জন্মের মত তাকে সে ছেড়ে যাবে। RRN