পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¥ချိရ উৰ্ব্বশ্বাসে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে জগৎ ডেকে বলে, “কোথা যাস ? এই শিশু ! কোথা যাস তুই ?”

  • দেখে আসি কি ব্যাপার ।”

'না, তোর যেতে হবে না । ওসব ব্যাপারে তোর গিয়ে কাজ নেই। বাড়ীতে দাসে থাক। ছাপ মারা হয়ে আছিস, খেয়াল নেই ? কিছু হলে পুলিশ সবার অ্যাগে তোকে ধরবে ।” “সে তো বাড়ী বসে থাকলেও ধরবে।” শিশু উধাও হয়ে যায়। বাপের প্রাণের শঙ্কা নিয়ে জগৎ যতক্ষণ দেখা যায় তার দিকে চেয়ে থাকে, তারপর সামনে দাড়ানো কারো প্ৰস্তাবে সায় দেবার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে নিজের মনে বিড় বিড় করে বলে, যাকগে । এমনিও যা, ওমনিও তাই। যাকগে । সেই থেকে ক্ষেপে আছে ছেলেটা এই যা ভাবনা । যাকগে । খানিক ভেবে আবার বলে, আমিও যাই। তবে । দেখে আসি। ধরে তো আমায়ও নয় ধরবে । সুদেবের দাওয়ায় বলাইচরণ, রামপাদ, নিখিল, অবিনাশের প্রতিদিন জড়ো হয় ভোরে, সুৰ্য কয়েক হাত উপরে উঠে ভালো করে আলো হলেই তাদের আডিডা ভাঙ্গে, যে যার বাড়ী যায় দোকানে সওদা কেনার দরকার থাকলে কিনে নিয়ে। রামপাদ, নিখিল আর অবিনাশ মধ্য ইংরাজী স্কুলের মাষ্টার, অঙ্ক ইংরাজী আর বাংলার। উপার্জন তাদের যথাক্রমে তেইশ, সাড়ে চব্বিশ আর উনিশ । তিনজনকেই অবশ্য কাগজে কলমে লিখতে হয় বেশী, স্কুলের গ্ৰাণ্ট বজায় রাখার জন্য। ভদ্রতা বজায় রেখে বেঁচে থাকতে প্ৰাণ তিনজনের বেরিয়ে গেছে। আজ তাদের আডড ভাঙ্গতে অনেক দেরী হয় । রামধনের চালা ডিঙ্গিয়ে দাওয়ায় রোদ এসে পড়ার অনেক পরেও তারা ওঠে না। আবদুলের বাইশ বছরের ছেলে রহমান খবর ছড়ানোর কাজে বেরিয়ে আবেদন জানিয়ে গেছে, স্কুলটা বন্ধ রাখার চেষ্টা যেন মাষ্টার মশায়রা করেন। স্কুলে যেন তঁরা না যান। আর বটতলার সভায় উপস্থিত থাকেন। স্কুল বন্ধ রাখার, এমন কি স্কুলে না যাবার ক্ষমতা রামপাদ, নিখিল আর অবিনাশের নেই, হেরম্বের শ্বশুরের সে স্কুল। কিন্তু মনে মনে তঁরা টের পান, তাদের কিছুই করতে হবে না, স্কুল আপনা থেকেই বন্ধ থাকবে। Ry