পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৌ গলা ছাড়া মাত্র জীবনলাল ধমকে তাকে থামিয়ে দেয়, রম্ভাকে মিনতি করে বলে, “যা না দিদি তুই এবার কলকাতা ফিরে ? রেহাই দে মোদের ?” রম্ভ বলে, “যাব গো, যাব। থাকতে আসি নি তোমাদের বাড়ী। আজ কালের মধ্যেই যাব, তোমাদের বাপের মরণের একটা বিহিত করে ।” দুপুর থেকেই লোক আসতে শুরু করে বটতলার মাঠে। চড়া রোদকে অগ্রাহ করে দুক্রোশ পথ হেঁটে এসে মানুষ প্ৰকাণ্ড বটগাছটার ঘন ছায়ায় বসে ঘাড় মুছে গামছা নেড়ে হাওয়া খায় গোড়ায় দু’চার্জন, তারপর বেলা একটু পড়ে এলে পিল পিল করে চারিদিকের গা থেকে মানুষ আসা আরম্ভ হয়। অপরাহ্নে লোকারণ্য হয়ে ওঠে বটতলার মাঠ । বড় মেলায় এরকম জনতা হয়, ঝুমুরিয়ায় আজ পর্যন্ত কোন সভায় এত লোক জমতে কেউ দ্যাখে নি, উত্তেজিত মানুষের এমন ভিড়। ভীরু ও দুর্বল একক মনে সমধমী মানুষের বিরাট সান্নিধ্য তেজস্কর সঞ্জীবনীর কাজ করে, ভীরুতা দুর্বলতা চাপা পড়ে জাগে বেপরোয় नाश्न । মহীউদ্দীন, শস্তু এরাও এতটা ভাবতে পারে নি। লোক যথেষ্ট হবে এটা তারা জানত কিন্তু এমন ভিড় হবে। আর আগে থেকেই সকলে এত গরম হয়ে থাকবে, এটা তাদের ধারণার বাইরে ছিল । তারা ক’জন সতর্ক হবার প্রয়োজন অনুভব করে। অন্য কর্মীদের সাবধান করে দেয়। দুরন্ত, অদম্য উল্লাসে রম্ভ এবং আরো অনেকের রক্তে যেন আগুন ধরে যায় । রামপালের লড়ায়ের কামনা উগ্র হয়ে ওঠে, কাঠ গোলার হাঙ্গামার দিন যতটুকু হয়েছিল তার শতগুণ বেশী। , শৈলেনও এটা ভাবতে পারে নি। জনতার দিকে তাকিয়ে, বিশৃঙ্খলা কমিয়ে জনতাকে সংযত করতে অপটু অনভিজ্ঞ মহীউদ্দীন শাস্তুদের গলদঘর্ম হতে দেখে, তার মুখ শুকিয়ে যায়। সে প্ৰস্তুত হয়েই এসেছে, কিন্তু এ অবস্থার জন্য নয়। এই জনতার জন্য প্ৰস্তুত হয়ে আসবার ক্ষমতাও তার নেই, আগে জানলে সদরে খবর পাঠিয়ে ব্যবস্থা করতে পারত। তার সময়ও আর নেই। শৈলেন বুঝতে পারে, একেবারে নিক্রিয় থেকে কোন মতে সভাটা হয়ে যেতে দেওয়াই এখন শ্রেয়, আর কোন উপায় নেই। সমবেত এই জনশক্তিকে একটু ঘাটাতে গেলেই আজ বিপদ হবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না। মহীউদ্দীন আর শঙ্কুরাই একমাত্র ভরসা, যদি পারে ওরাই এদের সামলাতে পারবে। R86